নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে বাচাঁতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই অংশ হিসেবে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনাসহ ১৩টি সুপারিশ বাস্তাবায়নে নিদের্শ দেয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। এছাড়া জেলায় থেকে বিভিন্ন সংস্থার পাঠানো প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অর্ধশত সম্ভাব্য সুপারিশ চুড়ান্ত শেষ পর্যায়ে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আপততে ১৩টি সুপারিশ বাস্তবায়নে অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো.নাসিম আহমেদ।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সিদ্ধান্ত ১৩টি সুপারিশগুলো হচ্ছে-সেন্টমার্টিনে সকল প্রকার অবকাঠামো ও সম্প্রসারন বন্ধ থাকবে, তবে প্রধানমন্ত্রী সম্মিত ব্যতিত (স্থানীয়দের ইকোলজিক্যালি বসতবাড়ি ও হাসপাতাল ছাড়া কোন অবকাঠামো করা যাবে না, দ্বীপের পরিষ্কার পরিছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা, শব্দ ও বায়ু দূষণ রোধ, জোনিং ও সংরক্ষিত এলাকা নির্মাণ, হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউস, যান চলাচল ব্যবস্থাপনা, দশ হাজার ম্যানগ্রোভ ও কেয়ারি বেষ্টনি বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি, জমি ব্যবহার নীতিমালা, জেটি ব্যবস্থাপনা, পর্যটক জাহজ পরিবহন, দ্বীপের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। এসব সুপারিশে বিস্তারিত উল্লেখ করে বাস্তবায়নে অধীনস্থ সংস্থাদের নিজ নিজ দায়িত্ব দ্রæত পালনের নির্দেশ দেয় প্রতিবেদনে।
দ্বীপে সভায় বক্তব্য দেন, জেলা পুলিশ সহকারী (ট্রাফিক) এসএম রকীব উর রাজা, টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভীন ও ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রমুখ। তবে এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনকে বাচাঁতে একটি বৈঠক অনুষ্টিত হয়। সেখানে দ্বীপ রক্ষায় কঠোর ১৩টি সম্ভাব্য সুপারিশ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকসহ দ্বীপের অধীনস্থ সংস্থাকে নির্দেশ পালনে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাসিম আহমেদ।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাসিম আহমেদ জানান, ‘প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে জীববৈচিত্র্য রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ভৌগলিক কারণে এই দ্বীপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে দ্বীপ অতিঝুঁকিতে আছে।’
তিনি জানান, ‘সরকার চায় খুব দ্রæত প্রবাল দ্বীপকে ভালো ম্যানেজমেন্ট করতে। তারই লক্ষ্যে গত মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্টিত এক সভায় দ্বীপ রক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। তারই সুত্রে দ্বীপে সরেজমিনে এসে সুপারিশ বাস্তবায়নে অংশীজনের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া ইকোট্যুরিজমসহ দ্বীপে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেটি বাস্তবায়নে ইতি মধ্য কার্যক্রম চলছে।’
বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা বাস্তবায়নে দ্বীপবাসি সহতায় করবে। পাশাপাশি দ্বীপের বাসিন্দাদের রুটি-রুজগারের বিষয়টি মাথায় রাখা অতন্ত জরুরী। আমরাও চায় দ্বীপে কোন নতুন করে ভবন না হোক। কারন দ্বীপ না বাচঁলে, দ্বীপের বাসিন্দাগুলো থাকবে কোথায়? তাছাড়া সম্প্রতি সময়ে জেলা প্রশাসকের কাছে দ্বীপবাসির পক্ষে থেকে বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো যাতে চুড়ান্ত নীতিমালায় অন্তভুক্ত করা হয় ,সেটি সরকারের কাছে দাবি আমাদের।’
জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সেন্টমার্টিন রক্ষায় নতুন হোটেল ও অবকাঠামো বন্ধসহ গত ২০ জানুয়ারী মাসে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্টিত হয়। সভা সুত্রে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে মহা পরিচালক-২ (অতিরিক্ত সচিব)-এর স্বাক্ষরিত ১৩টি সম্ভব্য সিদ্ধান্ত দ্রæত বাস্তবায়নে নির্দেশ দেয়। এই নির্দশনা পেয়ে সুপারিশ বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তর, কউক (উন্নয়ন কৃতপক্ষ), জেলা পুলিশ, বিআইডবিøউটিএ মৎস অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বেডি, কোস্ট গার্ড, জেলা-উপজেলা পরিষদসহসকল অধীনস্থ সংস্থা বাস্তাবায়নে মাঠে কাজ শুরু করছে। এসব কার্যক্রমে অগ্রগগতি বাস্তবায়নে মনিটরিং করবেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়।
টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী জানান, ‘সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়নে ইতি মধ্য কাজ চলছে। বিশেষ করে দ্বীপে যাতে নতুন করে কোন ভবন নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। পাশাপাশি দ্বীপের সংশ্লিষ্ট সকল অধীনস্থ সংস্থারাও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন রক্ষায় কাজ শুরু করেছে।’