জেরুজালেম, ১৬ অক্টোবর – চলছে মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ। ধসে পড়েছে শত শত বাড়ি ও ভবন। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে অনেকে। হাসপাতালে লাশের সারি। ‘নিরাপদ আশ্রয়ের’ খোঁজে দিগ্বিদিক ছুটছে লাখ লাখ মানুষ। চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র সংকট। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, ফুরিয়ে আসছে খাবার। ২২ লাখ মানুষের নগরী ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় এখন এই পরিস্থিতি। টানা দশ দিন সেখানে অবিরাম আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল।
হাসপাতালে ওষুধ নেই, শিগগিরই ফুরিয়ে যাবে জ্বালানি
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা উপত্যকার হাসপাতালের জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে। ব্যাপআপ জেনারেটর বন্ধ করার ফলে হাজার হাজার রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা হাসপাতাল। এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ২৮ বছর বয়সী মুহাম্মদ গুনেইম। তিনি বলেন, হাসপাতালে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র সংকট। বিদ্যুৎও নেই। জ্বালানি না থাকায় যেকোনো সময় জেনারেটরগুলোও বন্ধ হতে পারে।
গুনেইম বলেন, এর মানে হাসপাতালে কোনো সার্জারি করা সম্ভব হবে না। মুমূর্ষু রোগীদের কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেয়াও সম্ভব হবে না। আমরা বড় অসহায়। আমাদের করারও কিছু নেই।
খাবার নেই কোথাও
গাজার বাসিন্দাদের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে খাবার। মুদিদোকানগুলোর বেশির ভাগ বন্ধ। যে দু-একটি দোকান খোলা রয়েছে, সেখানেও মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে খাবার না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এসব মানুষের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।
গাজার দক্ষিণ অংশের খান ইউনিস এলাকার বাসিন্দা আবু মুতলাক। পরিবারের সদস্যদের জন্য রুটি নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, রুটি নেয়ার জন্য মানুষের এত দীর্ঘ সারি আগে কখনো দেখিনি। এভাবে আমি চারটি মুদিদোকানে গিয়েছি। প্রতিটি দোকানে ছিল অসংখ্য মানুষের ভিড়। এই পরিস্থিতিতে কী করতে হয়, জানি না। তবে আমার পালা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
গাজার আরেক বাসিন্দা আবু হামাদ বলেন, পরিস্থিতি খুবই ভয়ানক। দেখতেই পাচ্ছেন দোকানে দোকানে মানুষের দীর্ঘ সারি। কিন্তু আটা, পানি, তেল কিছুই নেই। আটার একটি প্যাকেট নেয়ার জন্য দুই ঘণ্টা ধরে আমরা অপেক্ষায় আছি। কিন্তু দোকানে আর কোনো আটা নেই। আমরা আজ আটা পাব কি না, জানি না। আগামীকাল যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
বাধ্য হয়ে দূষিত পানি পান
ইসরায়েল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর গাজায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, গাজার বাসিন্দাদের জন্য সুপেয় পানি এখন জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজার ২০ লাখ মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ করতে হলে গাজায় জ্বালানি প্রয়োজন। এক সপ্তাহ ধরে গাজায় কোনো ত্রাণসহায়তা ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, পানি শোধনাগার ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হওয়ার পর থেকে গাজার বাসিন্দারা সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। কুয়া থেকে দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এতে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহত এবং গুরুতর জখম ও আহত ব্যক্তিদের চাপে গাজার হাসপাতালগুলোয় তিল ধারণের জায়গা নেই। তবে বেশির ভাগ রোগীকে সেবা দেয়া যাচ্ছে না। এদিকে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী না আসায় হাসপাতালগুলোয় স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১৬ অক্টোবর ২০২৩