জেরুজালেম, ১৩ অক্টোবর – ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজা উপত্যকায় অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। আকাশপথে চালানো এই হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ছাড়িয়েছে দেড় হাজার।
এছাড়া ব্যাপক হামলায় গাজা ইতোমধ্যেই পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির লাখ লাখ মানুষের ঘুমানোর কোনও জায়গা নেই বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে আইসিআরসি বলেছে, ‘আজ রাতে গাজায় লাখ লাখ মানুষের ঘুমানোর জায়গা নেই।’
সংস্থাটি বলেছে, ‘গাজার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ পানি ও বিদ্যুতের পাশাপাশি মৌলিক প্রয়োজনীয়তার সংকটে রয়েছে। এমনকি হামলায় আহতদের কাছে অ্যাম্বুলেন্সও পৌঁছাতে পারছে না। বেসামরিক নাগরিকদের সংঘাত ও শত্রুতার প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রেডক্রস জানায়, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায়— হাসপাতালগুলোতে অনেক মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারেন এবং হাসপাতালগুলোই মর্গে পরিণত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী এই সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যেসব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল রাখা হয়েছে সেগুলোও আর কয়েক ঘণ্টা পর বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস যেসব ইসরায়েলিকে বন্দি করেছে; তাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় সচল করবে না।
কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতালগুলোতে বিনা চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা প্রকাশ করে রেডক্রসের আঞ্চলিক পরিচালক ফাবরিজিও কার্বোনি বলেছেন, ‘গাজা যেহেতু বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, হাসপাতালগুলোও বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে ইনকিউবেটরে থাকা নবজাতক এবং অক্সিজেন-সাপোর্টে থাকা বয়স্ক রোগীরা ঝুঁকিতে পড়ে গেছেন। কিডনির ডায়ালাইসিস বন্ধ হয়ে গেছে, এক্সরে করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ ছাড়া হাসপাতালগুলো মর্গে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।’
বৃহস্পতিবার তিনি জানান, হাসপাতালগুলো এখন জেনারেটরে চলছে। কিন্তু সেগুলোও কয়েক ঘণ্টা পর বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে গত শনিবার হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর প্রতিশোধ নিতে গাজায় ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ভূখণ্ডটির বাড়ি-ঘর এবং অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, এমনকি শরণার্থী ক্যাম্প লক্ষ্য করে চালানো অবিরাম এই হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় সোয়া চার লাখ ফিলিস্তিনি।
আল জাজিরা বলছে, গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আরও ৮৪ হাজার ৪৪৪ জন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখন সেই সংখ্যা ৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৭৮ জনে পৌঁছেছে বলে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা কোঅর্ডিনেশন অব হিউমেনিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওসিএইচএ) জানিয়েছে।
এছাড়া ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পের একটি আবাসিক ভবনে বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং আরও বহু লোক আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াদ বোজুম বলেছেন, জাবালিয়া ক্যাম্পের কেন্দ্রস্থলে একটি ভবনে বোমা হামলা হয়েছে। ভবনটি কয়েক ডজন লোকে পরিপূর্ণ ছিল, যাদের মধ্যে কেউ কেউ বিমান হামলার সময় আগের হামলা থেকে পালিয়ে এসেছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত এক হাজার ৫৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৫০০ শিশু এবং ২৭৬ জন নারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৬ হাজার ৬১২ জন ফিলিস্তিনি।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ১৩ অক্টোবর ২০২৩