সোয়েব সাঈদ::
সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা শিল্পীরা জড়ো হতে থাকেন কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রাঙ্গনে। কর্মব্যস্ত এ জীবনে একে অপরের সঙ্গে দেখা- সাক্ষাত, কূশল বিনিময়ের মূহুর্তেই প্রাণের স্পন্দন ছড়িয়ে পড়ল অনুষ্ঠান জুড়ে। একসঙ্গে এতজন শিল্পীর মিলন মেলা এ যেন শিল্পীদের কাছে অন্য রকম ভাললাগা। দিনব্যাপী নানা আনন্দায়োজন নবগঠিত কক্সবাজার জেলা সংগীত শিল্পী পরিষদের অভিষেক ও মিলন মেলা রূপ নেয় প্রাণের উৎসবে।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি। ‘রুদ্ধ দ্বার খুলুক সংগীতে’ এ প্রতিপাদ্যে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক মিলিত হন জেলার ৯ উপজেলার তিন শতাধিক সংগীত শিল্পী।
এর আগে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এর পরই ৯ উপজেলার তিন শতাধিক শিল্পী সমস্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
সংগঠনের সভাপতি কক্সবাজার বেতারের সংগীত প্রযোজক বশিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষন কান্তি দাশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন- সংগীতে ভালোবাসা, প্রেমের কথা, বাবার প্রেম, মায়ের প্রেম, দেশের প্রেম সবকিছু ধরে রাখতে হবে, তবেই এটি শিল্প থাকবে। শিল্পীদের কপিরাইট এড়িয়ে গুরুত্ব দিতে হবে মৌলিক গানের উপর। সংগীত মাধ্যমের উন্নয়ন ও শিল্পীদের কল্যাণে সকল শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ওমর ফারুক, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম প্রমুখ। অন্যান্যদের মধ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফরমান রেজা, সিনিয়র শিল্পী রায়হান উদ্দিন, আবু হায়দার ওসমানী, আলম শাহ, তালেব মাহমুদ, মানসী বড়ুয়া, উৎপলা বড়ুয়া, মিনা মল্লিকসহ তিন শতাধিক শিল্পী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
দুপুর দেড়টার দিকে শুরু হয় উপজেলা ভিত্তিক পরিবেশনা। ‘যাত্রা শুরু হল রে ভাই যাত্রা শুরু হল, কক্সবাজার জেলা শিল্পী পরিষদের’ সমবেত কন্ঠে এই গানটি নিয়ে প্রথমেই মঞ্চে আসেন চকরিয়া উপজেলার শিল্পীরা। এর পরের পরিবেশনা ছিল চকরিয়ার শিল্পী ও সংগঠক দ্বীপলাল চক্রবর্তীর নেতৃত্বে চকরিয়া উপজেলা দলের।
শিল্পী সমীর শীলের নেতৃত্বে কুতুবদীয়ার শিল্পীরা গেয়ে শুনান, ‘কুতুবদীয়া আঁর বাড়ি ফঅরি নজাইয়,জাইবার সমত আঁরও ঘাড়ত সাম্পান ভিড়াইও।’ বিভাস সেন গুপ্ত ও মানসী বড়ুয়ার নেতৃত্বে রামুর শিল্পীরা গণসংগীতে জাগিয়েছেন শিল্পী ও দর্শকদের। ‘মৃত্যুর উত্তাল সমুদ্র পেরিয়ে’ ও ‘লাঞ্চিত নিপিড়িত জনতার জয়’ পর পর দুটি গণ সংগীত পরিবেশন করেন তারা। ‘কি সুন্দইর্য্যা সৈকত নগরী হকসবাজার’ পর্যটন শহরকে নিয়ে লেখা এ গানটি সমবেত কন্ঠে গেয়েছেন কক্সবাজারের শিল্পীবৃন্দ। উখিয়ার শিল্পী এসএম জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে মঞ্চে আসেন উখিয়ার শিল্পীরা।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব বংশীবাদক ওমর ফারুক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও বংশীবাদক মো. রফিকুল ইসলাম। তারা দুজনই দর্শকদের মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন বাঁশির সুরে। তাঁরা দেশের গানের সুর তুলেন বাঁশিতে।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষন ছিল চট্টগ্রামের বিখ্যাত শিল্পী কুতুবদীয়ার সন্তান আলা উদ্দিন তাহের, প্রখ্যাত শিল্পী শরন বড়ুয়া, বুলবুল আকতার এবং রামুর বেহালা বাদক গোলাম কবিরের গান।
আলা উদ্দিন তাহেরের শেষ গান ছিল আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শিল্পী বুলবুল আকতারের গাওয়া- ‘অ হালা ছান গলার মালা পেট পুরেদ্দে তোয়ারলাই’ গানটি। এ সময় শিল্পী মঞ্চে ডেকে নেন মূল শিল্পী বুলবুল আকতারকে। গানটি দ্বৈতকন্ঠে গেয়েছেন তারা। শরণ বড়ুয়া গেয়েছেন, ‘কত যে তোমাকে ভেসেছি ভাল, সে কথা তুমি যদি জানতে।’ বুলবুল আকতারের প্রাণবন্ত পরিবেশনা ছিল ‘মাইট্ট্যা গুদাম টইনর ছানি,ঝরঝরাইয়া পরের পানি’ গানটি।
এছাড়া অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশন করেন আঞ্চলিক গানের শিল্পী মেরী, মিন্টু ব্যানার্জী ও মোহাম্মদ সেলিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেতারের উপস্থাপক শামীম আকতার, নাসির উদ্দিন বিপু ও এসএম জসীম।
সংগীত শিল্পী উৎপলা বড়ুয়া বলেন, কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক এই জীবনে নিজেদের মধ্যে হৃদ্যতা বাড়ানোর জন্য এ ধরনের আয়োজনের বিকল্প নেই। সবাইকে এক জায়গায় পেয়ে সত্যিই খুব ভাল লেগেছে।
সংগঠনের সভাপতি বশিরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার জেলায় অন্তত চার শতাধিক সংগীত শিল্পী রয়েছেন। কিন্তু সংগীতের শিল্পীদের এক জায়গায় আসার মত এতদিন কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিলনা। আমরা সংগঠনের মাধ্যমে চেষ্টা করবো জেলার শিল্প সংস্কৃতি প্রসারের পাশাপাশি শিল্পীদের কল্যানে কাজ করার।
অনুষ্ঠানের সব শেষ পর্ব ছিল আকর্ষনীয় র্যাফেল ড্র। এর আগে কক্সবাজার বেতারের সংগীত প্রযোজক বশিরুল ইসলামকে সভাপতি ও যন্ত্র শিল্পী ফরমান উল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে কক্সবাজার জেলা সংগীত শিল্পী পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষনা করা হয়।