রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১২ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

‘এই গ্রামের সবাই মৃত অথবা হাসপাতালে’

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
‘এই গ্রামের সবাই মৃত অথবা হাসপাতালে’


রাবাত, ১১ সেপ্টেম্বর – ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ মরক্কোর অ্যাটলাস পর্বতমালার তাফেঘাঘতে গ্রামের সব মানুষ হয় হাসপাতালে, আর না হয় মৃত। গ্রামের ২০০ জন বাসিন্দার মধ্যে ৯০ জনের মৃত্যুর খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও অনেকেই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

ওই গ্রামে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথম যে বাসিন্দার দেখা হয়, তিনি তাদের গ্রামের পরিস্থিতির একটা আনুমানিক ধারণা দিতে গিয়ে এই তথ্য জানান। তার নাম হাসান।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ধুলো-পাথরের ধ্বংসস্তূপ পার করে ওপরের দিকে উঠতে উঠতে আমরাও বুঝতে পারছিলাম কেন গ্রামের কেউই নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। তবে ইট ও পাথরের তৈরি গ্রামের পুরনো ধাঁচের বাড়িগুলো কোনোভাবেই এই মাত্রার ভূমিকম্প সামাল দেয়ার মত ছিল না।

ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে হাসান জানান, তারা (নিখোঁজরা) সরে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। তাদের হাতে নিজেদের বাঁচানোর সময়ও ছিল না।

তিনি আরও জানান, তার চাচা এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তাকে সেখান থেকে বের করার কোনো সম্ভাবনাও নেই। গ্রামে কারো কাছে এই মাত্রার ধ্বংসস্তূপ খোড়ার যন্ত্রপাতি নেই। আর তিন দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞরাও এসে পৌঁছায়নি।

হাসান বলেন, আল্লাহ আমাদের এই পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছেন এবং আমরা সবকিছুর জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এখন আমাদের সরকারের সহায়তা দরকার। তারা মানুষকে সাহায্য করার বিষয়ে অনেক দেরি করে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, মরক্কো কর্তৃপক্ষের উচিৎ সব ধরণের আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করা। কিন্তু তিনি সন্দেহ পোষণ করেন যে নিজেদের অহঙ্কারের কারণে হয়তো তারা সেই সহায়তা নেবে না।

বিবিসি বাংলার ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্রামের আরেক প্রান্তে গিয়ে আমরা দেখতে পাই বেশ কিছু মানুষ একজন ব্যক্তিকে সমবেদনা জানাচ্ছেন। আমরা জানতে পারি যে ওই ব্যক্তির নাম আব্দো রহমান। ভূমিকম্পে তার তিন ছেলে ও স্ত্রী মারা গেছে।

বালি-পাথরের একটি স্তূপের দিকে নির্দেশ করে তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি ছিল ওখানে। তবে একসময় তার বাড়ি থাকলেও এখন সেখানে কোনো বাড়ির চিহ্নও নেই।

আব্দো রহমান বলেন, ওই যে দেখুন সাদা কম্বল ও কিছু আসবাব এখনো দেখা যাচ্ছে। বাকি সব মাটির সাথে মিশে গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পর আব্দো রহমান তিন কিলোমিটার দৌড়ে তার বাড়ির দিকে আসেন। ভূমিকম্পের সময় তিনি যেই পেট্রোল পাম্পে কাজ করেন, সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন।

তার বাড়ির কাছে এসে চিৎকার করে তার ছেলেদের নাম ধরে ডাকাডাকি করেন আব্দো রহমান। তার মত আরো কয়েকজনও তখন তাদের পরিবারের সদস্যদের খুঁজছিলেন।

তিনি বলেন, গতকাল আমরা তাদের কবর দিয়েছি। আমরা যখন তাদের মরদেহ খুঁজে পাই, তখন তারা সবাই একসাথে গুটিশুটি মেরে ছিল। তিন ছেলেই ঘুমাচ্ছিল। ঘুমের মধ্যেই তারা মারা যায়।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, আরেকটু সামনে, গ্রামের সাথে লাগোয়া পাহাড়ি রাস্তার মোড়ে, একটি বড় তাঁবুতে বেশ কয়েকটি পরিবার একসাথে অপেক্ষা করছিল। সবদিক থেকেই শোনা যাচ্ছিল অবিরাম কান্নার আওয়াজ। কিছুক্ষণ আগেই ১০ বছর বয়সী শিশু খালিফার মরদেহ টেনে বের করা হয়েছে পাথরের স্তূপের নিচ থেকে। সেই মরদেহকে ঘিরে চলছিল আহাজারি।

মরক্কোর অ্যাটলাস পর্বতমালা অঞ্চলের একের পর এক গ্রামে ঠিক এই চিত্রই এখন দেখা যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এই সম্প্রদায়গুলো সাধারণত আধুনিক পৃথিবী থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্নই থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি বাইরের সাহায্য প্রয়োজন তাদের। তবে অ্যাটলাস পর্বতমালার মত মরক্কোর আরো অনেক অঞ্চলেই জরুরি সেবা পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষকে।

বিভিন্ন এলাকায় গ্রামবাসী হাত দিয়ে বা তাদের কাছে থাকা বেলচা, শাবল দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আটকে পড়া মানুষ উদ্ধার করছেন। আবার কিছুক্ষণ পর ওই বেলচা আর শাবল দিয়েই মরদেহের জন্য কবরও খুঁড়তে হচ্ছে তাদের।

বিবিসিকে এরকম একটি গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন, মানুষের কাছে আর কিছুই বাকি নেই। গ্রামে কোনো খাবার নেই, শিশুরা পানির পিপাসায় কষ্ট পাচ্ছে।

মারাকেশ থেকে ৫৫ কিলোমিটারের দক্ষিণের পাহাড়ি শহর আমিজমিজের প্রায় পুরোটাই মাটির সাথে মিশে গেছে। স্থানীয় হাসপাতাল ভবনটিও এতটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যে সেটির ভেতরে কাউকে চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালের সামনের মাঠে তাঁবু খাটিয়ে সেই তাঁবুর ভেতরেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে মানুষকে।

শহরের কেন্দ্রে ঢালাওভাবে পাটি বিছিয়ে টানা তিনদিন-রাত কাটিয়েছে শত শত মানুষ। আবারো ভূমিকম্প হতে পারে, এমন আশঙ্কায় তিন রাত ধরে ঘরে থাকছেন না তারা। এই শহরের মত আরো অনেক অঞ্চলেই প্রতিদিনই অগণিত কবর খুঁড়তে হচ্ছে গোরখোদকদের।

প্রসঙ্গত, ভূমিকম্পের পর মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ শনিবার দেশটিতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনী যেন উদ্ধারকাজে এবং জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে, সেরকম নির্দেশও দেন তিনি। কিন্তু এখনও দেশটির বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে অ্যাটলাস পর্বতমালা অঞ্চলের অনেক গ্রামে, জরুরি সেবা ও প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছেন সাধারণ মানুষ।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পুর্ন খবরটি পড়ার জন্য এই লিঙ্কে ক্লিক করুন ::‘এই গ্রামের সবাই মৃত অথবা হাসপাতালে’ first appeared on DesheBideshe.



আরো খবর: