বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি বেড়েছে জনদুর্ভোগ, সড়ক ভেঙে তছনছ

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া::

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকালয় থেকে ঢলের পানি নামতে শুরু করলেও এখন ঘরে ঘরে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। বিশেষ করে দুর্গত এলাকার লোকজন বিশুদ্ধ পানীয়জল ও শুকনো খাবার নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন। গতকাল বুধবার ঢলের পানি নামার মুহূর্তে উপজেলার সুরাজপুর এলাকার মাতামুহুরী নদী থেকে আনোয়ার হোসেন (৭৫) নামের এক বৃদ্ধার ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত আনোয়ার হোসেন সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের সুরাজপুর নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম।
অন্যদিকে গতকাল সকালে চকরিয়া উপজেলার পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী রওশন আলী পাড়া সংলগ্ন রেললাইনের কালভার্টের নীচে জমে থাকা পানিতে লাফ দিয়ে মোহাম্মদ আসিফ (১২) নামের এক কিশোর নিখোঁজ হয়েছেন। স্থানীয় পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিখোঁজ কিশোর আসিফ ওই এলাকার আবদুল মালেক মানিকের ছেলে। খবর পেয়ে গতকাল দুপুর থেকে চকরিয়া ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীদল নিখোঁজ কিশোরকে উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে বিকাল চারটা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে চকরিয়া উপজেলায় ভারী বৃষ্টিপাত কমে গেছে। এই অবস্থায় মাতামুহুরী নদী থেকে ঢলের পানির গতিও কমে গেছে। গতকাল সকালের দিকে বেশিরভাগ এলাকা থেকে ঢলের পানি নামতে শুরু হয়েছে। তবে দুর্গত এলাকায় মানুষের মাঝে দুর্ভোগ বেড়েছে।

তিনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদের সড়কগুলো এখনো পানিতে তলিয়ে গিয়ে ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। তাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি সচল হয়নি। গতকাল সকালে সুরাজপুর থেকে আনোয়ার হোসেন সুরাজপুর একজনের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অপরদিকে পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে পানিতে লাফ দিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন এক কিশোর। তার মরদেহ উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলা শাখা অফিসার মো জামাল মোর্শেদ বলেন, মাতামুহুরী নদী থেকে ঢলের পানি নামতে শুরু করলেও এখন নদীর দুই তীরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী, বিএমচর ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার দিগরপানখালী পয়েন্টে পাহাড়ি ঢলের চাপে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কারে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, মাতামুহুরী নদী থেকে ঢলের পানি নামার মুহূর্তে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনের কবলে পড়েছে জনবসতি, আবাদি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। গতকাল সকালে চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকায় নদী ভাঙনের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে একটি টিম পাঠানো হয়েছে।

চকরিয়া সুরাজপুর মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম, কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাহাব উদ্দিন, হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ, বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান, ফাসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার, লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মোহাম্মদ বুলেট ও সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তিনদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় থাকা বেশিরভাগ পরিবার বর্তমানে বিশুদ্ধ পানীয়জল ও শুকনো খাবার নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন। বিশেষ করে হতদরিদ্র পরিবার গুলো বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীন এলাকার সড়কগুলো কয়েকফুট পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলেও দাবি করেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, সাতদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যার তাণ্ডবে চকরিয়া উপজেলার দুর্গত জনগনের বিপরীতে এখনো পর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দ মেলেনি। এই অবস্থায় জনগনের দুর্ভোগ লাগবে সরকারি ভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রান ও অর্থ সহায়তা নিশ্চিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের জরুরি হস্তক্ষেপ করার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, এখনো পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ঢলের পানি জমে রয়েছে। চকরিয়া পৌরশহরের বাণিজ্যিক জনপদের মার্কেট গুলো এখনো গলা সমান পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে শতকোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।
চকরিয়াপৌরশহরের হাসেম মার্কেটস্থ ষ্টেশনারী, মনোহরী সামগ্রীর পাইকারী দোকানদার নবী ষ্টোরের মালিক মো, জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন্যায় তার দোকান এবং তৎসংলগ্ন ৪টি গুদামঘরে রক্ষিত প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকার মালামাল ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। আমি এখন দিশেহারা।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আরও বলেন, চকরিয়া শহর রক্ষা বাঁধের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানি। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কারে দাবি জানাচ্ছি।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদি বলেন, ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসকের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তিনি বলেন, গতকাল বুধবার সকাল থেকে আমি ব্যক্তিগত তহবিলের উদোগে সাধ্যমতো শুকনো খাবার নিয়ে দুর্গত জনপদে গিয়ে মানুষের মাঝে বিতরণ করছি।

কক্সবাজার ১ (চকরিয়া পেকুয়া ) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলার বন্যাদুগর্ত মানুষের জন্য সরকারি ভাবে কিছু পরিমান চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, চকরিয়া পেকুয়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা জানিয়েছি। পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রান সহায়তা নিশ্চিতে অনুরোধ করেছি।

তিনি বলেন, গত দুইদিন ধরে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘুরে ঘুরে মানুষের মাঝে আমি রান্না করা খাবার ও নগদ টাকা বিতরণ করছি। সরকারের পাশাপাশি দুর্গত মানুষের পাশে বিত্তশালী মানবিক মানুষ সবাই একটু এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। ##


আরো খবর: