পিয়ং ইয়াং, ২৬ জুলাই – রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু উত্তর কোরিয়ায় পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে একটি রুশ প্রতিনিধি দলও পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে পৌঁছেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন শোইগু নিজেই। অন্যদিকে চীনের একটি প্রতিনিধিদলও পিয়ংইয়ংয়ে গেছে।
তারা উত্তর কোরিয়ার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বুধবার (২৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫৩ সালে সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের ৭০তম বার্ষিকীতে যোগ দিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর নেতৃত্বে রাশিয়ার একটি প্রতিনিধিদল উত্তর কোরিয়ায় পৌঁছেছে। সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, রুশ এই প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পিয়ংইয়ংয়ে পৌঁছায়।
তারা সেখানে চীনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন পলিটব্যুরো সদস্য লি হংঝং। রুশ ও চীনা এই দু’টি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার পিয়ংইয়ংয়ে ‘বিজয় দিবসের’ ৭০তম বার্ষিকী উদযাপনে অংশ নেবে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নিজেদের সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল উত্তর কোরিয়া। সেসময় নিজের নাগরিকদেরও দেশে ঢুকতে দিচ্ছিল না বাকি বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন এই দেশটি। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে এই প্রথম বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিদেশি প্রতিনিধিরা যোগ দিচ্ছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে রুশ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দেশটিতে মঙ্গলবার পৌঁছে গেছেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য লি হংঝংয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলও সেখানে পৌঁছেছে। শোইগুকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান উত্তর কোরিয়ার সামরিক কর্তারা। শোইগু বলেছেন, তার এই সফরের ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও ভালো হবে।
রাশিয়া ও চীনের এসব প্রতিনিধি প্যারেডে উপস্থিত থাকবেন। উত্তর কোরিয়াও এবার বিশাল প্যারেডের আয়োজন করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। দেশটির সরকারি মিডিয়া জানিয়েছে, বিজয় দিবসের প্যারেড হবে ঐতিহাসিক।
আল জাজিরা বলছে, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে যে ইঙ্গিত মিলছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, উত্তর কোরিয়া বড় আকারের সামরিক কুচকাওয়াজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, শোইগুর এই সফর ‘রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার সামরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে’।
এছাড়া রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি ছোট ভিডিও পোস্ট করেছে। এতে বিমানবন্দরের টারমাকে লাল গালিচার ওপর উত্তর কোরিয়ার এক সামরিক কর্মকর্তা শোইগুকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন বলে দেখা যাচ্ছে। সেখানে একটি লাল ব্যানারে লেখা ছিল, ‘স্বাগত, রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কমরেড সের্গেই শোইগু!’
সাম্প্রতিক সময়ে কোরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে উত্তেজনা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ায় পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর পর উত্তর কোরিয়া গত সপ্তাহ থেকে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
এছাড়া ২০২২ সালের শুরু থেকে প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। মূলত দেশওটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন তার দেশের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে সৃষ্ট সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান আগ্রাসনে রাশিয়াকে সমর্থন করেছে উত্তর কোরিয়া। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি জোর দিয়ে বলেছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর ‘আধিপত্যবাদী নীতি’ মস্কোকে তার নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।
অবশ্য ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পিয়ংইয়ং সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির চেষ্টাও একসঙ্গে রুখে দিয়েছে রাশিয়া ও চীন।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ২৬ জুলাই ২০২৩