শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

জেলায় ডেঙ্গু ২ হাজার ছাড়িয়েছে

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩

এম. বেদারুল আলম, দৈনিক কক্সবাজার::

করোনা মহামারী যেতে না যেতেই আবার চোখ রাঙ্গাচ্ছে ডেঙ্গু। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পর ডেঙ্গুর হটস্পট হতে চলেছে কক্সবাজার। প্রতিদিনই বাড়ছে কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। সরকার ডেঙ্গু মোকাবেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারে উক্ত সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কক্সবাজারে বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২০০০ ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল ১১ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০০৭ জন। এরমধ্যে রোহিঙ্গা রোগীর সংখ্যা ১৯০৫ জন এবং স্থানীয় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০২ জন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস।
নবাগত সিভিল সার্জন ডা: বিপাশ খীসা জানিয়েছেন, কক্সবাজারে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ৯ জুলাই জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো: মোমিনুর রহমান জানিয়েছেন ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে জেলা সদর হাসপাতালে খোলা হয়েছে সার্বক্ষণিক টেলিমেডিসিন সেবাসহ নানা কর্মসূচি। যেকোনো ব্যক্তি মোবাইলের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু রোগের যে কোন চিকিৎসা মোবাইলের মাধ্যমে নিতে পারবেন। ৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্যানেল সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন। থাকছে বিনা ফি’তে ডেঙ্গু পরীক্ষার সুবিধাও। এছাড়াও পৌরসভায় মশক নিধন অভিযান শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।
সিভিল সার্জন অফিসের ডেঙ্গু সেলের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহ ফাহিম আহমেদ ফয়সাল জানান – কক্সবাজারের হোস্ট কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। ইতিমধ্যে জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ১০২ জন স্থানীয় রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প তিন, চার এবং ১৭ তে ১৯০৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রুগী রয়েছে। তাদেরকে জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য ক্লিনিক এবং বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৩ এ ৪৬৪ জন, ক্যাম্প ৪ এ ১৩৭ জন এবং ক্যাম্প ১৭তে ১২৭ সহ ১৯০৫ জন ডেঙ্গু রোগি সনাক্ত করা হয়েছে এবং চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও কক্সবাজার সদর, কক্সবাজার পৌরসভা, উখিয়া এবং টেকনাফে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। স্থানীয় ১০২ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে বেশিরভাগই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত নারী পুরুষের হার হল ৫৭ শতাংশ পুরুষ, ৪৩ শতাংশ নারী। সবচেয়ে বেশি ১২ থেকে ৪০ বছরের বয়সের ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় সদর হাসপাতালে নতুন করে ২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা হয়েছে। ১ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এছাড়া ছুটি নিয়ে চলে গেছে আরও পাঁচজন ডেঙ্গু রোগী। গত মাসেই ৩৭ জন রোগি ভর্তি হয়েছে সদর হাসপাতালে।

জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: মোমিনুর রহমান জানান- কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে হটলাইন চালু করা হয়েছে। হটলাইনের মোবাইল নং হলো ০১৭৩০ ৩২৪৭৭০। ডেঙ্গুর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রোগীদের কথা চিন্তা করে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে। ৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সার্বক্ষণিক টেলিমেডিসিন সুবিধা দিয়ে রোগীদের সেবা করছেন। যে কেউ নির্দ্বিধায় এই সেবা নিতে পারবেন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের তিনি ভীত না হয়ে যে কোন পরামর্শ উক্ত চিকিৎসকদের কাছ থেকে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। হট লাইনে কল দিলেই ডেঙ্গু সংক্রান্ত সকল চিকিৎসার এবং পরামর্শ যে কেউ নিতে পারবেন বলে জানান। বিশেষজ্ঞ প্যানেল যারা চিকিৎসা দেবেন তারা হলেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান নাজীর, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ ইয়াসির আরাফাত, জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ অহিদুল হেলাল, সহকারি রেজিষ্টার ডাঃ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, যথাক্রমে ডাঃ এম কামরুজ্জামান, ডাঃ মিছবাহ উদ্দিন, ডাঃ এ জি এম রায়হান, ডাঃ শাহেদা সুলতান, মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ শহীদুল আলম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবু তৈয়ব।
কক্সবাজারের নবাগত সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপাশ খীসা জানান- ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো অসচেতনতা। ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখা, বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা, ড্রেন পরিষ্কার রাখা, বাড়ির আশেপাশে যেখানে ময়লা জমে রয়েছে এবং পানি জমে রয়েছে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে মশার লার্ভা জমে থাকে সে স্থানগুলো ধ্বংস করে ফেলা খুবই জরুরী। এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত মশক নিধন অভিযান, পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে। মশার বিস্তার কমে আসলে এমনিতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত কমে যাবে। তিনি কক্সবাজারবাসিকে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়েও সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৭১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৬১ জন, মার্চে ৩৬০ জন, এপ্রিলে ২১১ জন, মে মাসে ১৫৮ জন, জুন মাসে ৩৩০ জন, এবং চলতি জুলাই মাসে ৩৭ জন আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে বলে সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে। মে, জুন, জুলাই এই তিন মাসেই লাফিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। যেটি খুবই উদ্বেগ জনক বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ৫ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন করার জন্য গত বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলের সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেন চিকিৎসকগণ।


আরো খবর: