শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

কুতুবদিয়ায় কৃষি কর্মকর্তার বাড়িভিটার জায়গা দখলে হামলা, পরিমাপে কারসাজির অভিযোগ!

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক,চকরিয়া::

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল এলাকায় প্রয়াত কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ আলমের বাড়িভিটার জায়গা জবরদখলে নিতে হামলা চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় দাপটশালী গিয়াস উদ্দিন গং। এমনকি বর্তমানে ওই কৃষি কর্মকর্তার পরিবার সদস্যদেরকে বাড়িভিটা থেকে উচ্ছেদের জন্য নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। অব্যাহত হুমকির মুখে বাড়িভিটা রক্ষা ও পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের গৃহকর্ত্রী রোকেয়া বেগম। গতকাল দুপুরে চকরিয়া শহরে সংবাদিক সম্মেলনে কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল এলাকার গিয়াস উদ্দিন গংয়ের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগী নারী রোকেয়া বেগম।

সাংবাদিক সম্মেলনে কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ আলমের স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৫৪) বলেন, তার স্বামী ফিরোজ আলম জীবিত অবস্থায় ২০১৮ সালে আলী আকবর ডেইল মৌজার বিএস ২২৯২,২২৯৩ ও ২২৯৫ দাগের অংশ থেকে আগের মালিক থেকে তিনটি দলিলে জায়গা ক্রয় করেন। পরে ওই জায়গার একটি অংশে বসতঘর নির্মাণ ও অপর অংশে চাষাবাদ করে পরিবার নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগদখলে রয়েছেন। ক্রয়কৃত এসব জায়গার বিপরীতে আমাদের নামে জমাভাগ খতিয়ানও সৃজিত হয়েছে।

রোকেয়া বেগম বলেন, কয়েকবছর আগে তার স্বামী কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ আলম মারা যান। ইতোমধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সন্তানদের লেখাপড়ার সুবাদে ছোট মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে তিনি চট্টগ্রাম শহরে থাকেন। এ অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে গত কয়েকমাস আগে হঠাৎ করে আমার প্রতিবেশী স্থানীয় আলী আকবর ডেইল ফতেহআলী সিকদারপাড়ার জাবের মিয়ার ছেলে নুর আলম ও তার ভাই গিয়াস উদ্দিন আমার বাড়িভিটার কিছু অংশের জায়গা দখলে নিয়ে তাদের বাড়ি নির্মাণ শুরু করে। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে গিয়ে আমি গিয়াস উদ্দিন ও তার ভাই নুর আলমকে আমার জায়গা ছেড়ে দিতে বলি। প্রয়োজনে সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপ করে পরে কাজ করতে বলি।

জায়গার মালিক
রোকেয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার কথা অমান্য করে তারা দখলচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলে এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে নুর আলম ও তার ভাই গিয়াস উদ্দিন গংয়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কা:বি: ১৪৪ ধারার আদেশ চেয়ে আমার মেয়ে তানজিনা সুলতানা সুমী বাদি হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কক্সবাজার আদালতে একটি এমআর মামলা (নং ১৫০৫/২২) রুজু করা হয়। শুনানি শেষে আদালত বিরোধীয় জায়গা নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট দিতে এসিল্যান্ড কুতুবদিয়া ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কুতুবদিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
এরই প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত এসিল্যান্ড (কুতুবদিয়ার ইউএনও) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা সার্ভেয়ার দ্বারা সরেজমিন তদন্ত রিপোর্ট দেন। সেখানে বিরোধীয় জায়গা আমাদের সম্পত্তি বলে উল্লেখ করেন। এরই আলোকে মামলার শুনানীতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত আমার জায়গায় অনাধিকার প্রবেশ ও সেখানে নির্মাণ কাজ না করতে আসামি গিয়াস উদ্দিন ও তার ভাই নুর আলমকে বারণ করেন।

বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনার পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পুনরায় পেশিশক্তির দাপট দেখিয়ে তারা আবারও আমার জায়গা দখলে নিয়ে তাদের বাড়ির কাজ শুরু করে। বিষয়টি আমার মেয়ে তানজিনা সুলতানা সুমী কুতুবদিয়া থানার ওসিকে জানালে তিনি মোবাইল ফোনে লাইভে দেখাতে বলেন। ওসির কথা মতো আমার মেয়ে তানজিনা দখলবাজ গিয়াস উদ্দিন গংয়ের বাড়ি নির্মাণ কাজ দেখানোর সময় তারা আমার মেয়ের উপর হামলা চালিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে। তাদের মারধরে কলেজপড়ুয়া আমার মেয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা একবারে অসহায় হয়ে পড়েছি। আগে কুতুবদিয়া থানার পুলিশ আমার পরিবারকে সহযোগিতা করলেও এখন দেখি পুলিশও রহস্যজনক কারণে নীরবতা পালন করছেন। ওসি সাহেবকে ঘটনা জানালে তিনি উল্টো লাইভ দেখাতে বলেন। তাতে জড়িতরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগম বলেন, আলী আকবর ডেইল মৌজার বিএস ২২৯২ দাগের আমার বাড়ি
ভিটার জায়গা দখল চেষ্টা নিয়ে এডিএম কোর্টে মামলার পর দখলবাজরা ক্ষান্ত হচ্ছে না। এ অবস্থায় অভিযুক্ত দখলবাজ নুর আলম, গিয়াস উদ্দিন ও জসিম উদ্দিনকে আসামি করে চলতিবছরের পহেলা ফেবুুয়ারী আমি রোকেয়া বেগম, আমার ছেলে মোহাম্মদ আদিল, মেয়ে রাবেয়া সুলতানা ও তানজিনা সুলতানা সুমী পক্ষভুক্ত হয়ে কুতুবদিয়াস্থ সহকারী জজ আদালতে নতুন একটি মামলা (অপর মামলা নং ০৯/২৩) রুজু করি।

মামলার শুনানিকালে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিরোধীয় জায়গা পুনরায় পরিমাপ করার জন্য নির্দেশনা দেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে কুতুবদিয়া ভুমি অফিসের দুইজন কর্মকর্তা রাসেল ও সাইফুদ্দিন খালেদ আমার প্রতিপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে কুটকৌশল করে অন্য দাগের জমি বিরোধীয় দাগে সংযুক্ত করে পরিমাপ শেষ করেন। এতে আমার জায়গা প্রতিপক্ষ নুর আলমের নির্মাধীন বাড়ির ভেতরে পড়েনি বলে সাজানো রিপোর্ট দেন তারা।

রোকেয়া বেগম অভিযোগ করে বলেছেন, দুই ভুমি কর্মকর্তা কতৃক পরিমাপে চল-চাতুরীর মাধ্যমে কারসাজির আশ্রয় নেয়ায় মামলার ধার্য তারিখে তিনি আদালতের বিজ্ঞ বিচারককে অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে আদালত আগামী সোমবার (১০ জুলাই) বিরোধীয় ওই জায়গা নিরপেক্ষভাবে পরিমাপের জন্য আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ সহকারী ও ভুমি অফিসের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

জায়গার মালিক ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগম বলেন, অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন এলাকায় দাপটশালী লোক। তার কথায় ভৃমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী থেকে শুরু সবাই একঘাটে পানি খায়। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, বিজ্ঞ আদালত নির্দেশ দিলেও ভুমি অফিসের সংশ্লিষ্টরা টাকার বিনিময়ে পুনরায় পরিমাপে আবারও আমার ক্ষতিসাধন ঘটাবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুতুবদিয়া থানা পুলিশ আগের মতো নিরপেক্ষ থাকলেও অভিযুক্তরা আমার জায়গা দখলে হামলা চালাতে সাহস পেত না। এখন অভিযুক্ত দখলবাজরা আমার পরিবারকে বাড়িভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে এলাকায়। কিছুদিন আগে অভিযুক্তরা জেলা কৃষি বিভাগে লোক পাঠিয়ে পরিচয় গোপন রেখে আমার প্রয়াত স্বামী কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ আলমের নামীয় পেনশনের কাগজপত্র ভাগিয়ে নিতেও চেষ্টা করেছেন।

ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার বাড়ভিটার সম্পত্তি দখলবাজ চক্রের কবল থেকে রক্ষায় দেশের আইন আদালত ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের কাছে পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন।


আরো খবর: