ঢাকা, ০৮ জুন – রাজধানীর বসুন্ধরায় আবাসিক এলাকায় স্প্রে করা বিষে দুই শিশু নিহতের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
ডিবি বলছে, ডিএসএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির স্প্রে করা বিষগুলো ছিলো গুদাম, কারখানা বা বড় কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য। কিন্তু তারা সেটি বাসা বাড়িতে স্প্রে করেছে। আবার এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে কোনো ধরনের তথ্য দেয়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত ২ জুন বসুন্ধরার আই ব্লকের একটি নতুন বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা তেলাপোকা মারার বিষ স্প্রে করেন। এর দুদিন পর ভুক্তভোগী পরিবারটি ওই বাসায় ওঠে। বাসায় প্রবেশ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ৪ জুন সকালে শাহিল মোবারত জায়ান (৯) মারা যায়। একইদিন রাত ১০টায় মারা যায় শায়েন মোবারত জাহিন (১৫)।
এই ঘটনায় নিহতের বাবা গত ৫ জুন ডিএসএস অর্গানাইজেশনের তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা টিটু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
ডিবি প্রধান বলেন, ঘটনার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) ফরহাদুল আমিন আত্মগোপন করেন। তারা গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন ৷ পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ এই বিষ বড় গার্মেন্টস ও বীজ গুদাম বা বাণিজ্যিক স্থানে ব্যবহার করা হয়। এগুলো ঘর বা বাসা বাড়িতে ব্যবহার করা যায় না। আর ঘরবাড়িতে এগুলো ব্যবহার করলেও ৭২ থেকে ৯৬ ঘন্টা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। বসুন্ধরার এই বাসাটিতে ব্যবহৃত তেলাপোকা নাশক রাসায়নিক বিষ সঠিক অনুপাতে ছিল না। ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিষাক্ত আইটেমস কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, এর অনুমোদন ছিল কি না, এর রাসায়নিক অনুপাত সঠিক ছিল কিনা, মানবদেহের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর এই বিষয়গুলোকে যাচাই-বাছাই করা হবে।
এদিকে নিহত দুই শিশুর বাবা মোবারক হোসেন তুষার বলেন, যে প্রতিষ্ঠানের কারণে পেস্ট কন্ট্রোলের কারণে আমার দুই সন্তানকে হারাতে হলো। তারা যেনো কোনোভাবেই পার না পান। আমরা যেন ন্যায় বিচার পাই।
কোনো কাজ আমরা না পারলে বিশেষজ্ঞদের ডাকি। কিন্তু তারা টাকার লোভে আমার দুইটা সন্তানকে মেরে ফেললো। আমি যতটা শুনেছি কোম্পানিটির স্প্রে করা বিষ বাসা বাড়িতে দেয়ার বিষ ছিলো না। এগুলো গুদামে স্প্রে করার জিনিস, অথচ তারা আমার বাসায় এগুলো দিয়েছে।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ০৮ জুন ২০২৩