গাজীপুর, ৩০ এপ্রিল – গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাময়িক বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কাছে নির্বাচন মুখ্য নয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।
তবে এ নির্বাচন সমন্বয়ের জন্য গঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিশেষ কমিটির টিমলিডার ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেছেন, কেউই দলের গঠনতন্ত্রের ওপরে নন। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত না মানলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়বেন জাহাঙ্গীর আলম। তাঁকে আবারও দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
আজ রোববার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বৈধ হলে মেয়র পদের নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারক নেতারা। তাঁদের দৃষ্টিতে, গাজীপুরের নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।
সেই ক্ষেত্রে বিএনপির ভোটাররা জাহাঙ্গীর আলমের দিকেই ঝুঁকবেন। তখন নির্বাচন বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হবে। তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বহুল আলোচিত বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ইতোমধ্যে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে গাজীপুরের নির্বাচন সমন্বয়ের জন্য গঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিশেষ কমিটির সমন্বয়ক ও দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আজ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলবেন। প্রয়োজনে তাঁকে ঢাকায় আসার তাগিদ দেবেন।
আগামী ৮ মে এই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এই সময়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন থেকে নিজেকে গুটিয়ে না নিলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে দলের নীতিনির্ধারক নেতারা জানিয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে তাঁকে আরেক দফায় বহিষ্কার করা হবে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় বহিষ্কৃত হন জাহাঙ্গীর আলম। পরে ক্ষমা চাওয়ার পর দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলার শর্তে তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু চার মাস না যেতেই তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
এ অবস্থায় বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন জাহাঙ্গীর আলম। দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। তিনিই সমাধান বাতলে দেবেন। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই। আর তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তাই মেনে নেব। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বললে সেটাও সানন্দে মেনে নেব।’
আজমতের পক্ষে একাট্টা
এদিকে রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেছেন, দলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে নিয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগে কোনো ধরনের বিভক্তি নেই। দলের প্রতিটি নেতাকর্মী আজমত উল্লা খানের প্রার্থী পক্ষে একাট্টা। তিনি গতকাল কাশিমপুর ও কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় বলেছেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবারও নৌকা প্রতীকের জয় হবে। সৎ, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া দেখা যাচ্ছে।
২৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় বিশেষ কমিটি গঠন
গাজীপুরে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের নির্বাচনসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড দেখভালের জন্য ২৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় বিশেষ কমিটি গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এই কমিটির টিমলিডার। সমন্বয়ক হলেন মির্জা আজম। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপদেষ্টা।
এই কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন– দলের সভাপতিমণ্ডলীর চার সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ-বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, সাঈদ খোকন, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং এবং নির্মল কুমার চ্যাটার্জি।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনও এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
সূত্র: সমকাল
এম ইউ/৩০ এপ্রিল ২০২৩