সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত সিগারেট অথবা কয়েল থেকে

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩


ঢাকা, ১০ এপ্রিল – রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে সিগারেট অথবা মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি। এই শপিং কমপ্লেক্সের আদর্শ মার্কেট এবং মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার মাঝামাঝি কোনো জায়গা থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা তাদের। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার কোনো আলামত পায়নি কমিটি।

আগুন লাগার সময় মার্কেটের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আট প্রহরী, একজন ইলেকট্রিশিয়ান, কর্মরত ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী নেতাসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে কমিটি।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, আদর্শ মার্কেট এবং মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের লাগোয়া অংশের তৃতীয় তলার এমব্রডারি কারখানা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এর কাছাকাছি বিদ্যুতের কোনো ডিস্ট্রিবিউশন বক্স ছিল না। নিদির্ষ্ট কয়েকটি জায়গা ছাড়া পুরো মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল। মার্কেট দুটির বিদ্যুতের লাইন সব সময়ই রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। শুধু নিরাপত্তা প্রহরীদের থাকার জায়গা, মসজিদ ও মার্কেট অফিসে লাইট ছিল। তবে ইন্টারনেটের রাউটার চালু ছিল।

তাঁরা জানান, আদর্শ মার্কেটের চার তলায় নিরাপত্তা প্রহরীদের থাকার জায়গা রয়েছে। তাদের থাকার জায়গার নিচেই রয়েছে একটি এমব্রডারি কারখানা ও একটি গোডাউন। কমিটির সদস্যদের ধারণা, সেহরির সময় ভোর ৪টার দিকে চার তলা থেকে সিগারেটের কোনো ফিল্টার তৃতীয় তলায় পড়ে এমব্রডারি কারখানা অথবা গোডাউনে প্রথমে আগুন ধরে। অথবা নিরাপত্তা প্রহরীদের থাকার জায়গার জলন্ত মশার কয়েল থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সের আগুনে আটটি মার্কেট পুড়ে যায়। ওই দিন রাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অঞ্চল-১ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে কমিটিতে আগুনের কারণ অনুসন্ধানের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ রাখা হয়নি। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিরূপণ করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। গতকাল রোববার কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার দিন ধার্য থাকলেও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সম্পূর্ণ না হওয়ায় আরও এক দিন সময় বাড়ানো হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান মেরীনা নাজনীন বলেন, ‘সব কাজ প্রায় শেষ করেছি। এখনও সব তালিকা পাইনি। আগামীকালের মধ্যে আমরা রিপোর্ট জমা দেব।’

আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আমাদের পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করব।’ ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা মার্কেটে দোকানের তালিকার কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ করেছি। প্রতিটি দোকানের আয়তনের সঙ্গে মালপত্রের ধরন অনুযায়ী তার পাইকারি মূল্য দিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করেছি। ক্ষয়ক্ষতির তালিকায় দোকান নির্মাণের কাঠামোগত মূল্যও নির্ধারণ করা হয়েছে।’

ডিএসসিসির মুখপাত্র আবু নাছের বলেন, বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের মধ্যে এনেস্কো টাওয়ারে ক্ষতি কম হয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা আজ সোমবার থেকে দোকান খুলবেন। সিটি করপোরেশন ও সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীরা কোনো ক্ষতিপূরণ নেবেন না।

বুধবার থেকে দোকান চালুর সম্ভাবনা: অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা আগামী বুধবার থেকে চৌকি বিছিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এর আগে পুরো জায়গার আবর্জনা পরিষ্কার করে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হবে, যাতে সেখানে তাঁরা দোকান বসাতে পারেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ডিএসসিসি।

গতকাল নগর ভবনে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক সমিতির নেতা, স্থানীয় সংসদ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক শেষে মেয়র তাপস সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার সকাল থেকে পুনোর্দ্যমে পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করব, যাতে করে দু-এক দিনের মধ্যে সেখানে ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর আগেই দোকানিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের কাজও শেষ হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য এরই মধ্যে ২ কোটি টাকা তহবিলে জমা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ডিএসসিসিও আর্থিক সহযোগিতা দেবে। প্রধানমন্ত্রীও সহযোগিতা দেবেন। সমাজের বিত্তবান মানুষও আশা করছি এগিয়ে আসবেন। আগামী বুধবার নাগাদ তাঁরা যেন চৌকি বিছিয়ে ব্যবসা করতে পারেন, তার পুরো ব্যবস্থা ডিএসসিসি করে দেবে।

ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ডিএসসিসি ও মার্কেট কমিটিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের যে তহবিল হচ্ছে, সবাই আশাবাদী যে এটা একটা বড় আকার ধারণ করবে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মেয়রের সঙ্গে কথা বলে আজ আমরা খুবই আনন্দিত। এত দ্রুত সিদ্ধান্ত পাবো আশা করিনি।’

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/১০ এপ্রিল ২০২৩


আরো খবর: