বেইজিং, ২৪ ফেব্রুয়ারি – রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে আগ্রহী এবং সংলাপ-আলোচনাই সংকট সমাধানের একমাত্র কার্যকর উপায় বলে আবারও মন্তব্য করেছে চীন। যা গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া তার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে চীনের প্রতিক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি।
শুক্রবার ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রথম বার্ষিকীতে উপলক্ষে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতি এবং ক্রমান্বয়ে সৈন্য প্রত্যাহারসহ ১২ দফা প্রস্তাব দিয়েছে।
বিবৃতিতে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সংঘাত এবং যুদ্ধ কারোরই উপকারে আসে না। সব পক্ষকে অবশ্যই যুক্তিবাদী থাকতে হবে এবং সংযম অনুশীলন করতে হবে। আগুন জ্বালানো এবং উত্তেজনা বাড়াতে এড়িয়ে চলতে হবে এবং সংকটকে আরও অবনতি বা এমনকি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া থেকে রোধ করতে হবে।
চীন তার মিত্র রাশিয়ার নিন্দা করা বা রুশ আগ্রাশনকে ‘আক্রমণ’ বলে উল্লেখ করা থেকে বিরত রয়েছে এবং রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞারও সমালোচনা করেছে।
চীন আরও বলেছে, শুধুমাত্র রাশিয়ার উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত তা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদিত হওয়া উচিত। কারন একতরফা নিষেধাজ্ঞা এবং চাপ শুধুমাত্র নতুন সমস্যা তৈরি করে।
ইউক্রেন ক্রমাগতভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে যখন রাশিয়ান সৈন্যরা তার ভূখণ্ড দখল করে আছে। বলেছে যে যুদ্ধে কোনো বিরতি রাশিয়াকে তার সৈন্যদের পুনরায় সংগঠিত করতে সক্ষম করবে।
এদিকে, চীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত জর্জ টোলেডো বলেছেন, চীনের বিবৃতিটি শান্তি প্রস্তাব নয় তবে ইইউ এটিকে ঘনিষ্ঠভাবে অধ্যয়ন করবে।তবে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন, কারন বিবৃতিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করেনি চীন।
বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের জন্য এক ব্রিফিংয়ে টলেডো বলেন, জাতিসংঘের সনদের মূল্যবোধ রক্ষা ও সমুন্নত রাখার জন্য চীনের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে।
একই ব্রিফিংয়ে, চীনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত জান্না লেশচিনস্কা চীনা বিবৃতিটিকে ‘একটি ভাল লক্ষণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
লেশচিনস্কা বলেছেন, ইউক্রেন আশা করে যে চীনও রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করবে এবং চীন তার রাজনৈতিক সমর্থনে আরও সক্রিয় হবে।
চীন এই সংঘাতে কতটা নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন এমন প্রশ্নের জবাবে লেশচিনস্কা বলেন, যদি নিরপেক্ষতা হয়, তাহলে চীনের উচিত রাশিয়া এবং ইউক্রেনের উভয় পক্ষের সাথে কথা বলা। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে চীনা পক্ষ বেশিরভাগই রাশিয়ার সাথে কথা বলছে, কিন্তু ইউক্রেনের সাথে নয়।।
অন্যদিকে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, কিছু কূটনীতিকের কাছ থেকে বিবৃতির সমালোচনামূলক মন্তব্যের কোন ভিত্তি নেই এবং এর উদ্দেশ্য ছিল চীনকে অপমান করা।
ওয়াং নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তারা কিছু করেছে কিনা সে বিষয়ে তারা চিন্তা করলে ভালো হবে।
এছাড়াও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার যুদ্ধের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে একটি ‘শান্তি ভাষণ’ দেবেন, যেখানে তিনি রাশিয়ার নিন্দা এড়িয়ে শান্তির আহ্বান জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের ভাষণ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩