পঁচাত্তর বছরে পা দিলো ছাত্রলীগ। দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনটি ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যেই মূল দল আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এই ছাত্র সংগঠন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ নামে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। পরে ১৯৫৩ সালে নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের পৃষ্ঠপোষকতায় একঝাঁক মেধাবী তরুণের উদ্যোগে সেদিন যাত্রা শুরু করে ছাত্রলীগ। গত ৭৪ বছরে ছাত্রলীগের ইতিহাস হচ্ছে— বাঙালি জাতির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন, স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনা, গণতন্ত্র ও প্রগতির সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের প্রতিনিধি দলের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, সকাল ৯টায় কার্জন হলে কেক কাটা এবং দুপুর ২টায় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্বোধন ও আনন্দ শোভাযাত্রা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ৫৪’র সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত, ৫৮’র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ৬৬’র ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক শাসকের পদত্যাগে বাধ্য করা এবং বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, ৭০’র নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ, স্বাধীনতা পরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। এখনকার জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষ নেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।
৫ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থাকবেন আওয়ামী লীগের দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সম্প্রচার হবে প্রতিটি জেলা, মহানগর ও উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে।
এছাড়া ৬ জানুয়ারি সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে পথশিশুদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ, বিকাল ৩টায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি,৭ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, ৮ জানুয়ারি সকাল ১১টায় ঢাবির অপরাজেয় বাংলার সামনে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত কর্মসূচি যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে ইউনিটের (জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ) নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।