জয়পুরহাটে মাদক মামলার নথি জালিয়াতি করে আসামির জামিন নেওয়ায় দুই আইনজীবীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার (৬ আগস্ট) দুপুরে জয়পুরহাটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর আলম তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশি পাহারায় প্রিজনভ্যানে তাদের জয়পুরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে ওই মামলার আসামি দুই আইনজীবী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছিলেন।
জামিন নামঞ্জুর হওয়া দুই আইনজীবী হলেন- হাসিনুর রহমান ও রবিউল ইসলাম। হাসিনুর রহমান প্রাক্তন এক বিচারপতির ছেলে। তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী। ঢাকার উত্তরা এলাকায় তিনি বসবাস করেন। রবিউল ইসলাম জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। তিনি জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোগাছী বিল্লাহ এলাকার বাসিন্দা।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলমের বেঞ্চ সহকারী মো. আজাদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আদালত, পুলিশ ও মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা বাজার এলাকার আইনাল হোসেন ওরফে রানা ও তার ভাই হয়রত আলীর কাছ থেকে ৩০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পাঁচবিবি থানায় মাদক মামলা করা হয়। ওই মামলায় নিম্ন আদালত ও জজ কোর্ট থেকে আইনালের জামিন নামঞ্জুর করা হলে আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। আবেদনের সময় নথি জালিয়াতি করে ৩০০ পিস ইয়াবাকে ৩০ পিস করা হয়। এতে হাইকোর্ট আইনালের জামিন মঞ্জুর করেন এবং আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
জালিয়াতির বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনলে হাইকোর্ট মামলার নথিপত্র তলব করেন। মামলার মূল এজাহার ও জব্দ তালিকার সঙ্গে হাইকোর্টে দাখিল করা নথির সঙ্গে ইয়াবা সংখ্যার গরমিল দেখতে পান হাইকোর্ট। এরপর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন। পরে সদর থানায় ওই মাদক মামলার আসামি আইনাল, আইনজীবী সমিতির এক মুহুরী আমিনুল ইসলাম ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মোজাহিদুল ইসলাম হানজালাকে আসামি করে মামলা করা হয়।
মামলাটি সিআইডির ইন্সপেক্টর শামসুল আলম তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে পেশকার মোজাহিদুল ইসলাম হানজালাকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ করে চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ওই মামলার তিন ও চার নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম ও হাসিনুর রহমান হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন। হাইকোর্টের জামিন শর্ত মোতাবেক রোববার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটে আদালতে জামিন আবেদন করেন। বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন।
দুই আইনজীবীর জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় দুপুরে আদালত চত্বরে আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সেসময় ওই দুই আইনজীবীকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে বিকেল সাড়ে ৫টায় কড়া পুলিশ পাহারায় প্রিজন ভ্যানে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আজাদুর রহমান বলেন, জামিন জালিয়াতি মামলায় দুই আইনজীবী জামিন আবেদন করলে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করেছেন এবং তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
কোর্ট ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩০০ পিস ইয়াবা ৩০ পিস দেখিয়ে আসামির জামিন জালিয়াতি মামলায় দুই আইনজীবী হাইকোর্টের জামিনে ছিলেন। আজ দুপুরে দুই আইনজীবী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন করেন। বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এ সময় আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দুই আইনজীবী হাসিনুর রহমান ও রবিউল ইসলামকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।