চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় স্ত্রীর পরকীয়া সইতে না পেরে ৯ বছরের ছেলেকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন প্রবাসী বাবা। ছেলের নাম মো. সানি ও বাবা নুরুল কবির।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া এজাহার ডাক্তারের বাড়ির একটি পুকুর পাড় থেকে ছেলের লাশ ও বাবাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে বাবা মারা যান।
নুরুল কবির বান্দরবান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বালাঘাটা সিকদার পাড়ার আমিন শরীফের ছেলে। তবে ছেলেকে নিয়ে তিনি সাতকানিয়ায় কেন এসেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাতকানিয়া ও বান্দরবান থানা পুলিশ জানায়, ২২ সেপ্টেম্বর স্ত্রী নাছিমা আকতার ও বালাঘাটা এলাকার ওসমান গনির ছেলে গ্রামীণ ব্যাংক কর্মী জমির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বান্দরবান থানায় একটি অভিযোগ করেন নুরুল কবির।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পাঁচ-ছয় মাস ধরে গ্রামীণ ব্যাংক কর্মী জমির উদ্দিনের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন তার স্ত্রী নাছিমা। এরই মধ্যে নাছিমা-জমিরকে নিজ বাড়ি থেকে হাতেনাতে ধরেছেন প্রতিবেশীরা। বিষয়টি জানার পর আবুধাবী থেকে দেশে ফিরে আসেন নুরুল কবির। দেশে আসার পর স্ত্রীর কাছে বিভিন্ন সময়ে পাঠানো টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত চাইলে দিতে পারেননি।
এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে সাতকানিয়ার জনার কেঁওচিয়া এজাহার ডাক্তারের বাড়ির একটি পুকুরে ছেলেকে বিষপান করিয়ে হত্যার পর নিজে বিষপানে আত্মহত্যা করেন নুরুল কবির।
প্রত্যক্ষদর্শী এজাহার ডাক্তারের বাড়ি এলাকার হোসাইন মোহাম্মদ এনাম ও জমির উদ্দিন জানান, বিকেলে নির্মাণাধীন রেললাইনে এলাকার ছেলেরা খেলা করছিল। এ সময় পার্শ্ববর্তী পুকুর পাড়ে কেউ একজন ছটফট করতে দেখলে ছেলেরা দৌড়ে যায়। তখন দেখে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন নুরুল কবির। পাশেই তার ছেলে সানির লাশ।
মিজানুর রহমান নামের আরেকজন বলেন, সোমবার রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়াস্থ আঁধার মা’র দরগাহ এলাকায় আসেন নুরুল কবির ও তার ছেলে। সেখানে দোকান থেকে পানি নেন। পরে ছেলেকে জোর করে টেনে পূর্ব দিকের রাস্তায় দিয়ে চলে আসেন নুরুল কবির। এরপর কোথায় গেছে জানি না। তবে মঙ্গলবার দুপুরে এজাহার ডাক্তারের বাড়ির দক্ষিণ পাশে বাবা-ছেলেকে বসে থাকতে দেখি। বিকেলে পুকুর পাড়ে গিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন তারা।
সাতকানিয়া থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পুকুর পাড় থেকে নুরুল কবিরকে জীবিত ও তার ছেলে সানির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিষের বোতলও উদ্ধার করা হয়েছে। নুরুল কবিরকে প্রথমে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। বাবা-ছেলে দুজনের লাশ চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এক মাস আগে স্ত্রী নাছিমা আকতার ও গ্রামীণ ব্যাংক কর্মী জমির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বান্দরবান সদর থানায় একটি অভিযোগ করেছিলেন নুরুল কবির। সেখানে তার স্ত্রীর সঙ্গে জমির উদ্দিনের পরকীয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্ত্রীর পরকীয়া সইতে না পেরেও আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।