আব্দুস সালাম,টেকনাফ (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনদ্বীপ যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরের শাহপরীরদ্বীপ গোলারচরের মোহনায় এফবি সাদ্দাম নামের একটি ফিশিং ট্রলার ডুবির ঘটনায় দুইজন উদ্ধারকারীসহ এখনও তিনজন নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনায় ১৬ জন উদ্ধার হলেও উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে কোস্টগার্ডের চৌকিতে হামলা, ভাংচুর চালিয়েছে দ্বীপবাসি। এ ঘটনায় কোস্টগার্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে। গুলিতে এক জন গুলিবিদ্ধসহ ৫ জন আহত হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুর আড়াই টার দিকে টেকনাফ থেকে নিত্য পণ্য ও যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিনদ্বীপ যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরের গোলারচর মোহনায় এফবি সাদ্দাম নামের একটি ফিশিং ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে।
সেন্টমার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ৬৫ দিন মাছ ধরার সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে সেন্টমার্টিনের সাদ্দাম হোসেনের মালিকানাধীন এফবি সাদ্দাম টেকনাফ ঘাটে ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ট্রলারটি সেন্টমার্টিনদ্বীপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এসময় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ট্রলারটিতে ১২ জন যাত্রী উঠে। একই সঙ্গে ট্রলারটিতে ছিল ৬ জন জেলে। ট্রলারটি দুপুর আড়াই টার দিকে শাহপরীরদ্বীপ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরের গোলারচর মোহনায় পৌঁছলে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে ডুবে যায়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, ঘটনার পর পরই সেন্টমার্টিন ঘাট থেকে কয়েকটি ফিশিং ট্রলার, কয়েকটি সার্ভিস বোট যোগে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ১৬ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও একজন নিখোঁজ রয়েছে।
নিখোঁজ নুর মোহাম্মদ সৈকত(২২) সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের বাসিন্দা ও টেকনাফ সরকারী কলেজের ছাত্র। এদিকে ট্রলার ডুবির পর উদ্ধার করতে যাওয়া একটি স্পীড বোট ডুবে গেলে উদ্ধারকারী মো ফাহাদ(২৮) ও মো. ইসমাইল (২৭) সেন্টমার্টিন পশ্চিম কোনার পাড়ার মৃত আজম আলীর ছেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এসময় স্পীড বোটে থাকা অপর তিনজন উদ্ধারকারী আব্দুল্লাহ, আরিফ ও উত্মত আলী রাত দশটার দিকে সাঁতরে শাহপরীরদ্বীপ ও সাবরাং উপকূল দিয়ে তীরে উঠে । এনিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় তিনজন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মো জাহাঙ্গীর। নিখোঁজ তিন জন হলো ডুবে যাওয়া ট্রলারের যাত্রী নুর মোহাম্মদ সৈকত ও উদ্ধারকারী ফাহাদ ও ইসমাইল।
অপরদিকে, ট্রলার ডুবির পর উদ্ধার তৎপরতার জের ধরে কোস্টগার্ডের সাথে সেন্টমার্টিনবাসির উত্তেজনা তৈরি হয়। সেন্টমার্টিন থেকে কয়েকজন বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ট্রলার ডুবির পর কোস্টগার্ডকে অবহিত করা হলেও তারা উদ্ধার তৎপরতায় সাগরে নামেননি। দ্বীপবাসি সার্ভিস বোট ও ফিশিং ট্রলারে উদ্ধারে নামেন। এসময় ১৬ জনকে উদ্ধার করে ঘাটে ফিরলে কোস্টগার্ড সদস্যরা তাদের সাথে ছবি তোলার চেষ্টা করে। এতে দ্বীপবাসির সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত লোকজন কোস্টগার্ডের চৌকিতে হামলা করে ভাংচুর করে এবং একটি যানবাহন পুড়িয়ে দেয়। এসময় ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে কোস্টগার্ড। এ ঘটনায় হানিফ নামে একজন গুলিবিদ্ধ সহ ৫ জন আহত হয়েছে। এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানান তারা।
এব্যাপারে কোস্টগার্ডের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কোস্টগার্ডের সাথে দ্বীপবাসির একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফাঁকাগুলি বর্ষণ করা হয়েছে। দ্বীপের পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।