বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৮ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

সমুদ্র সৈকত জুড়ে তীব্র ভাঙন

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ভাঙন। এ ভাঙনের কবলে সৈকতে লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টও পড়েছে চরম ঝুঁকিতে। ফলে পর্যটনের জন্য শ্রীহীন হতে পারে সৈকত এলাকা।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের শৈবাল পয়েন্ট থেকে উত্তরের সমিতিপাড়া পর্যন্ত সৈকতের ভাঙন দেখা দেয় গত ৪ বছর ধরে। যেখানে অসংখ্য ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের জোয়ারে সৈকতে পর্যটকের কাছে সবচেয়ে প্রিয় লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্মচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। ফলে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম, এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৪ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।

সৈকতের লাবণী পয়েন্টের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ তুহিন জানান, গত ৪ বছর ধরে লাবণী পয়েন্টের উত্তরে সাগরের ভাঙনে ঝাউগাছ বিলীন হয়ে যায়। লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশও ভাঙনের কবলে পড়ে। এটা রক্ষার জন্য জিউ ব্যাগ দেয়া হয়। কিন্তু গত কয়েকদিনের জোয়ারে লাবণী পয়েন্টে ভাঙন তীব্র হয়ে উঠে। যার কারণে সৈকতের বালিয়াড়ির বিশাল অংশ বিলীন হয়ে ভাঙন কাছা-কাছি চলে এসেছে। যেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্সও প্রায় বিলীনের পথে।

একই পয়েন্টের ব্যবসায়ী সরওয়ার আলম জানান, বালিয়াড়িতে কিটকট (বিচ ছাতা) সারিবদ্ধভাবে যেখানে রাখা হতো সেই লাবণী পয়েন্টের ওই অংশ বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন চলে গেছে দক্ষিণের সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টেও। এসব পয়েন্ট পর্যটকের ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় পয়েন্ট। ফলে পর্যটন শিল্পেও এর প্রভাব পড়বে।

আগত পর্যটকদের কয়েকজন জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নামার প্রধান পথ হচ্ছে লাবণী পয়েন্ট। এ পয়েন্টে নামলেই সামনে ভাঙন। যা পর্যটকের জন্য আতংকেরও বটে।

গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সি সেইফ সংস্থার লাইফগার্ড কর্মী মোহাম্মদ জহির বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতের একমাত্র নিরাপদ গোসলের জায়গা হচ্ছে লাবণী পয়েন্ট। কিন্তু ভাঙ্গনের কারণে পর্যটকরা আসবে কিনা সংশয় রয়েছে।

তিনি জানান, সৈকত লাগোয়া ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ দিকে লাবণী পয়েন্টের কাছা-কাছি পর্যন্ত কয়েক বছর ধরে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের ধাক্কায় সৈকত বিলীন হচ্ছে। উপড়ে পড়ছে উপকূল রক্ষার হাজার হাজার ঝাউগাছ। এর মধ্যে ডায়াবেটিক হাসপাতাল, শৈবাল ও লাবণী পয়েন্টে প্রায় ৫০০ মিটার সৈকত এলাকায় বড় আকারে ভাঙন ধরেছে। এখন ভাঙন এলাকা আরো বেড়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, সৈকতের তীব্র ভাঙনে পুলিশের কয়েকটি স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। এটা রোধে পরিবেশবান্ধব কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, প্রাথমিকভাবে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগের কাজ চলমান রয়েছে। স্থায়ীভাবে বাঁধ নিমার্ণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাজিরারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশের ভাঙনরোধে কয়েক বছর ধরে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভাঙনরোধ সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে এই বাঁধ তৈরির নীতিগত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে এই বাঁধ তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই আগামী শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এর আগে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করা হবে।


আরো খবর: