এম.এ আজিজ রাসেল:
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় কল্প জাহাজভাসা উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। এই উৎসবকে ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরি হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে শহরের বৌদ্ধ মন্দিরস্থ ক্যাং পাড়াবাসী ও বড়বাজার রাখাইন যুব সংঘের উদ্যোগে হাজার দৃষ্টিনন্দন কল্পজাহাজ নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রায় রঙ-বেরঙের পোশাক পরিধান করে হাজার রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেয়। এসময় কল্প জাহাজ নিয়ে ঢাক-ডোল ও বাজনা বাজিয়ে নেঁচে গেয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতে উঠে সবাই।
শোভাযাত্রা দেখতে প্রধান সড়কের দু’পাশে অসংখ্য উৎসুক জনতা ভীড় করে। প্রায় ১ ঘন্টা পর কল্প জাহাজ নিয়ে শোভাযাত্রার ইতি ঘটে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্টে এসে। সৈকতের বালিয়াড়িতে হাজার হাজার নর-নারীর সম্মিলন। জাহাজভাসা উৎসবের আনন্দে সামিল হয়েছে ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনও। এ যেন এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
পরে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাগরের উত্তার ঢেউয়ের সাথে ভাসানো হয় কাঙ্খিত কল্প জাহাজ। ঢেউয়ের তালে তালে ভাসছে বাঁশ, বেত, কাঠ, রঙ্গিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরী নান্দনিক কল্প জাহাজ। যা নজর কাড়ে সবার। কক্সবাজার শহর ছাড়া চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল, হারবাং, টেকনাফ ও চকরিয়াতেও এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
কক্সবাজার রাখাইন একতা সংঘের সভাপতি উসেন থোয়েন (উসেনমি বাবু) বলেন, আজ থেকে দুইশ বছর আগে মিয়ানমারে মুরহন ঘা নামক স্থানে একটি নদীতে মংরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম এ উৎসবেরর আয়োজন করেন। প্রবারণা পূর্ণিমার একসাথে মিলিত হবার জন্য এ আয়োজন চলতো। সেখান থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারেও এ উৎসবের প্রচলন হয়। যা আজ অবদি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবার প্রবারণায় রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য বিশেষভাবে প্রার্থনা করেছে।
কক্সবাজার সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন জানান, আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্নিমা পর্যন্ত তিনমাস বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বর্ষাব্রত পালন করেন। এ সময় বৌদ্ধ দায়ক-দায়িকারা প্রতি অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে অষ্টশীল পালন করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তিনমাস ব্যাপী বর্ষাব্রত পালন কালে সদ্ধর্ম্ম বিষয়ক লেখাপড়া, গবেষনা ও জ্ঞান আহরন করেন।
বর্ষাব্রত পালনের শেষ দিন আশ্বিনী পূর্ণিমাকেই বলা হয় প্রবারণা পূর্ণিমা। আড়াইহাজার বছর আগে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার দিনে মহামানব গৌতম বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের উদ্দেশ্য বলেছিলেন- “হে ভিক্ষুগন বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য, জীবজগতের প্রতি মৈত্রী প্রদর্শন করে, দেব মনুষ্যের প্রয়োজনীয় সুখের জন্য, দেশ-দেশান্তরে বিচরণ করে কল্যাণময় ধর্ম প্রচার করো। পরিপূর্ন পরিশুদ্ধ ব্রক্ষচর্যের মহিমা কীর্তন করো, স্মৃতি সহকারে স্থির, গম্ভীর ও জ্ঞান গর্ভ বাক্য এবং সদ্ধর্ম্ম প্রচার করো”। বুদ্ধের এ উপদেশ পালনে প্রতিবছর নানা আনুষ্ঠানিকাতায় এ দিনটি পালন করা হয়। প্রবারণা পূণির্মার পরদিন থেকে এক মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানের মাধ্যমে তা পালন করা হবে।