শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

সমস্যা সমাধানে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক :
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমোন গিলমোর-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সকালে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণের পর ৪ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছায় গিলমোরের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল।
অন্যান্যদের মধ্যে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন, ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভিক্টর ভেলেক, ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিও ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) সেবাস্টিয়ান রিগার-ব্রাউন ও বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক কর্মসূচির তত্ত্বাবধানকারী আনা অরল্যান্ডিনি।

সেখানে পৌঁছে দলটি- প্রতিনিধি দলটি ক্যাম্প-৪ ও ক্যাম্প-১৮ আশ্রয়শিবিরে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর পরিচালিত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম, ইউনিসেফ পরিচালিত লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত ই–ভাউচার সেন্টার পরিদর্শন করেন। পরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ গিলমোর সহ অন্যান্যরা ইউএনএইচসিআরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়ে মিলিত হন।

মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা জানান, সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনখারাবি-অপহরণ, চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের। তাঁরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।

মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া রোহিঙ্গারা নেতা আরো জানান, রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, সম্পদ লুটের বিবরণ তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও কথা ওঠে। রোহিঙ্গারা সেখানে বলেন, চীনের মধ্যস্থতায় কিছুদিন ধরে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা চলছে। কিন্তু রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। ফিরে যাওয়ার আগে রোহিঙ্গারা প্রথমে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি চান। তারপর মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গারা ফিরতে আগ্রহী।

মতবিনিময় সভায় একজন রোহিঙ্গা নারী ক্যাম্পে দাতাগোষ্ঠীর সাহায্য কমিয়ে আনার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আগে রোহিঙ্গা পরিবার প্রতি ১০ ডলার করে দেওয়া হতো। এখন ৮ ডলার দেওয়া হয়। তা দিয়ে রোহিঙ্গা পরিবারের চলতে কষ্ট হচ্ছে উল্লেখ করেন।
এসময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা, রোহিঙ্গাদের সকল ধরনের সমস্যা সমাধানে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলটি সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে সরাসরি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। সেখানে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কাযক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজারস্থ আরআরআরসি কার্যালয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধিদল মতবিনিময় সভা করেছেন। সুত্রে জানা গেছে, রাতে কক্সবাজারে অবস্থানরত জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবে ইইউ প্রতিনিধিদল।

বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে গত ২৪ জুলাই ছয়দিনের সফরে ঢাকায় আসেন আয়ারল্যান্ডের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ইমোন গিলমোর।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি।


আরো খবর: