ঈদের প্রথম দুদিন পর্যটক আগমন তেমন না থাকলেও তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিনে প্রায় লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটেছে সমুদ্র নগরী কক্সবাজারে । শুক্রবার (১৫ জুলাই) দুপুরে সৈকতে লাবনী, সুগন্ধা, ডায়বেটিক ও কলাতলী পয়েন্টে লাখো পর্যটকে মুখরিত ছিল বিশ্বের সর্ববৃহত সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার । সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের পাশাপাশি স্থানীয়দের উপস্থিতিও কম ছিল না ৷ ছুটির দিনে প্রিয়জন ও পরিবারের সাথে একান্ত সময় কাটাতে ছুটে এসেছেন তারা।
ঢাকা থেকে আগত জাহিদ হোসেন বলেন, গতকাল এসেছি আমরা প্রায় ২০ জন বন্ধুবান্ধব। সচারাচর ছুটি পাওয়া যায়না। তাই এবার কোরবানি ঈদে অফিস থেকে এক্সট্রা ছুটি নিয়েছি৷এবং ঠিক করলাম কক্সবাজারে এবার এক সপ্তাহ থাকবো। হোটেল ভাড়াও আগের চেয়ে একটু কম দামে পেয়েছি। খরচের দিক দিয়ে মোটামুটি ভালোই আছি। তবে ওয়েদারটা একটু বৈরী।
কক্সবাজার হোটেল -মোটেল গেস্ট হাউস -রেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, শুরুতেই ঈদের আগে ও ঈদের পরের দুদিন পর্যটকের দেখা না গেলেও তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিনে প্রায় লক্ষাধিক পর্যটক এসেছেন। এসব পর্যটকদের জন্যে বিভিন্ন হোটেল ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত রুম ভাড়া ছাড় দেয়া হচ্ছে। কোন কোন হোটেল বিশেষ অফারও দিয়েছেন। আমরা শুরুতেই কিছুটা হতাশ ছিলাম। তবে এখন মোটামুটি স্বস্তি ফিরে এসেছে। সব হোটেলে কম বেশি পর্যটক উঠেছেন। ইতিমধ্যে ছুটি শেষ হয়েছে তবুও আগামী কয়েকদিন পর্যটকের চাপ থাকতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
হোটেল কক্স টুডে ব্যবস্থাপক আবু তালেব জানান, ঈদের দুদিন পর্যটক তেমন না এলেও গতকাল থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। হোটেল রুমে ছাড় দেয়া হচ্ছে এবং অতিথিরা খুশি মনে গ্রহণ করছেন। গতকাল থেকে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। অতিথিদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বেশ। ইতিমধ্যে হোটেলের ৬০-৭০ ভাগ রুম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে।
সৈকতে ঘুরতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল মারুফ জানান, আজ ঈদের ষষ্ঠ দিনে অনেক বছর পর পরিবার নিয়ে সমুদ্র দেখতে এলাম। বাড়ির পাশে সমুদ্র হয়ে কখনো সেজেগুজে খুব বেশি আগ্রহ নিয়ে সমুদ্র দেখা হয়না। বাহিরের পর্যটকের পাশাপাশি স্থানীয় দর্শনার্থীর সংখ্যাও দেখা যাচ্ছে। সৈকতে মোটামুটি ভালোই লাগছে৷
সমুদ্র সৈকতে দায়িত্বরত সিসেইফ লাইফ গার্ড কর্মী মোঃ সিফাত উল্লাহ বলেন,আমাদের টিম পর্যটকদের সেবায় সবসময় প্রস্তুত। গতকাল এবং আজকে পর্যটকের চাপ একটু বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ আমাদের লোকবল কম। সৈকতের লাবণী, সুগন্ধ ও কলাতলী পয়েন্টে আমাদের সদস্যরা দায়িত্বে রয়েছে। আমাদের নির্দেষনা রয়েছে কোনো পর্যটক যাতে গভীর সমুদ্রে গিয়ে গোসল না করে। কারণ এসময়ে সমুদ্র উত্তাল থাকে।তবুও কিছু কিছু পর্যটক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে।
সৈকতের কলাতলী পয়েন্টের ফটোগ্রাফার আবদুল হালিম বলেন, ঈদ মৌসুম হিসেবে বেশ ভালোই আয় করতে পেরেছি । পর্যটকও ভালো এসেছে এবার।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল ব্যবসায়ী নেতা মুকিম খান জানান, সাধারণত কোরবানির ঈদে কক্সবাজারে তেমন পর্যটক আসেনা।তবে রমজান ঈদে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি দেখা যায় ।তাও গত দুদিনের তুলনায় বেশ কিছু পর্যটক দেখা যাচ্ছে। আশা করছি এবার ভালোই ব্যবসা হবে। পর্যটকের চাপ আরও এক সপ্তাহ থাকতে পারে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের টিম অবস্থান করছে। পর্যটক হয়রানি ও যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ট্যুরিষ্ট পুলিশ বদ্ধপরিকর।ঈদের দিন থেকে আজ ষষ্ঠদিনে প্রায় লক্ষাধিক পর্যটক আগমন করেছেন বলে ধারণা করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ জানান, সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছেন । পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।