রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলায় মোঃ ইসহাক নামের এক রোহিঙ্গাকে যুবককে বিতর্কিত সংগঠন আরসার সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে।
বুধবার (২৬ জুলাই) সকাল ৭ টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ২-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের ব্রিজের নিচে এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত মো. ইসহাক (৪০) বালুখালী ৭ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ-১ ব্লকের মোহাম্মদ রশিদের ছেলে।
ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) সৈয়দ হারুনুর রশীদ ও ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক) মো. আমির জাফর
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে এপিবিএন কর্তৃপক্ষ জানান, ভোরে উখিয়া উপজেলার ৭ নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের এ-১ ব্লকের নিজের ঘর থেকে মো. ইসহাককে আরসা সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে কুতুপালং ২-ইস্ট আশ্রয় শিবিরের ব্রিজের নিচে আনার পর দূর্বৃত্তরা পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে রেখে চলে যায়।
স্থানীয়দের মাধ্যমে ওই এলাকায় একটি মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পায় এপিবিএন পুলিশ। পরে পুলিশের একটি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় মৃতদেহটি উদ্ধার করেছে। নিহতের চোখ উপড়ে ফেলার পাশাপাশি হাত ও পেটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরসা সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে। তারপরও ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুলিশ খোঁজ খবর নিচ্ছে।
আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস হিউম্যান রাইট এর চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের বলেন, আরসা সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত হত্যা, গুম, করার ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা আতংকে দিনাতিপাত করছে।
রোহিঙ্গা নেতারা আরো জানান, বুধবার সকালে আরসার সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে রোহিঙ্গা ইসহাক হত্যা করে। ইসহাক প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলায় আরসার সন্ত্রাসীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান,খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে রোহিঙ্গা যুবক ইসহাকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ১০ টির বেশি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে। তৎমধ্যে ৭ টি ক্যাম্পে সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার তৎপরতা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো দিন অপরাধের স্বর্গরাজে পরিণত হচ্ছে। ফলে কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মানবপাচার, মাদক ব্যবসাসহ নাশকতামূলক বিশৃঙ্খলা ও অপরাধ কর্মকাণ্ড।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে,২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ২২২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ৬০ টির বেশী আগুন লাগানো হয়েছে নাশকতামূলক ভাবে।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত সাড়ে সাত মাসে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করেছে ৭৯ জন বাংলাদেশীকে । তার মধ্যে অপহৃত ৬ জন খুনের শিকার হয়েছেন।
জেলা পুলিশের সূত্র জানা যায়,শুধু চলতি বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন হয়েছেন অর্ধশত। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৫৪ টি । তৎ মধ্যে ২০২১ সালে ২২ টি ২০২২ সালে ৩২ টি। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৮১ জন খুন হয়েছেন।
বিগত এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২৬ লাখের বেশি ইয়াবা ও ২৯ কেজি আইসসহ ৭৭৯ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।
বিগত এক বছরে উখিয়া-টেকনাফের অবস্থিত ৩৪ ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৩৮০ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও ১৬৮ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।