শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

রামুর ঈদগড়ে রাতে পাড়ায় পাড়ায় গুলিবর্ষণ, একা পেলে অপহরণ

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩

কক্সবাজারের রামুর ঈদগড়ে হঠাৎ কালো পোশাক পরা একদল অস্ত্রধারী গোষ্ঠীর আনাগোনা বেড়েছে। ইতোমধ্যে একটি গ্রামে গুলিবর্ষণও করেছে দলটি। এর আগে ঈদগড়ের স্থানীয় বাসিন্দাকে অপহরণও করেছে তারা। এখন রাতে বাড়িতে থাকতে ভয় পাচ্ছেন লোকজন। ফলে পাহাড়ি এলাকা ঈদগড় জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ঈদগড়ে গত কিছুদিন ধরে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়েছে। গত ৮ জুলাই সন্ধ্যার সময় স্থানীয় ঈদগড়ের পার্শ্ববর্তী বাইশারী ইউনিয়নের কেঙ্গারবিল এলাকায় কিছু রাখাল গরু নিয়ে জঙ্গল থেকে আসার পথে ১৭ জনের সশস্ত্র একটি সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী গ্রুপ দেখতে পায়। পরে তারা ফিরে এসে এই খবর অন্যান্যদের জানালে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুল আমীন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তিনি এই সংবাদটি পেয়ে আসছেন স্থানীয়দের কাছে। কিন্তু নিজ চোখে না দেখায় তিনি এতদিন বিশ্বাস করেননি। সন্ত্রাসীরা গত ৯ জুলাই থেকে ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের বইজ্জা কাঠা, গুড়াইল্যা কাটা, বউঘাট এলাকায় বিচরণ করছেন।

তিনি জানান, অস্ত্রধারী এসব সন্ত্রাসীরা কেঙ্গারবিল দিয়ে ঈদগড়ের ৬ নাম্বার ওয়ার্ডে প্রবেশ করে। পরে সেখানে জঙ্গলে অবস্থান নেয়। এই সময় বিভিন্ন লোকজন তাদের দেখতে পায়।

এই ইউপি সদস্য আরও জানান, রোববার রাত ২ টায় এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানান ১৭ থেকে ১৮ জনের একটি অস্ত্রধারী দল ঢুকেছে এলাকায়। পরে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে সেদিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা ৩ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে পালিয়ে যায়। বিষয়টি তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঈদগড়ের ইউপি চেয়ারম্যানসহ রামু থানার ইনচার্জকেও অবহিত করেন।

ঈদগড়ের জনপ্রিয় আঞ্চলিক গানের শিল্পী নুরুল আলম কুতুবী জানান, ১০ জুলাই রাত ২টার সময় তার ঘরের সামনে জুতা পায়ে হেঁটে যাওয়ার আওয়াজ শুনতে পান তিনি। ওই সময় তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখেন ২৫ থেকে ৩০ জনের একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হেঁটে যাচ্ছে। দৃশ্যটি দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, কালো পোশাক পরা প্রত্যেকের কাঁধে ভারী অস্ত্র দেখা গেছে। দেখতে খাটো এসব লোকগুলো প্রত্যেকেই মুখোশ পরা ছিল।

এদিকে গত ৩ জুলাই বাইশারী ও ঈদগড়ের সীমান্তবর্তী কাওরাতলী এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয় ঈদগড়ের ২ নং ওয়ার্ডের বদর মিয়ার ছেলে শফিউল করিমকে। অপহরণের ২ দিন পর ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে।

মুক্তি পাওয়ার পর অপহৃত শফিউল করিম জানান, অপহরণের পর তার চোখ বন্ধ করে গহীন পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন পর চোখ খুলে দেওয়া হয় তার। এরপর তিনি দেখেন অপহরণকারী সবাই ভারী অস্ত্রধারী। দেখতে সবাই উপজাতির মতো চেহারা। মার্মা ভাষায় কথা বলছিলেন তারা।

তিনি জানান, অপহরণের পর মুক্তিপণের জন্য তাকে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে।

স্থানীয়দের দাবি, শফিউল করিমকে যারা অপহরণ করেছিল তারাই এখন এলাকায় প্রতিরাতে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। শফিউলকে অপহরণ করে মূলত তাদের অবস্থান জানান দিয়েছেন।

জানা গেছে, অপরাধ ঠেকাতে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান জোরদার হওয়ায় সমতলে প্রবেশের চেষ্টা করছে পাহাড়ি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। তবে কি কারণে ঈদগড়ে অবস্থান নিয়েছে সেটি বুঝে উঠতে পারছে না এলাকাবাসী। তাদের বিচরণ আতঙ্ক বেড়েছে পুরো এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, এমনিতেই তারা অস্ত্রধারী গরু পাচারকারীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তার উপর নতুন করে এই অস্ত্রধারী গোষ্ঠীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তারা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ‘বিষয়টি তারা খোঁজ খবর নিচ্ছেন। যেভাবেই হোক কোনো সন্ত্রাসী যাতে অবস্থান বা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে সেজন্য বাড়তি সতর্ক অবস্থানে আছে তারা।’

স্থানীয়দের আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে ঈদগড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

সুত্র: চ্যানেল ২৪


আরো খবর: