রামু প্রতিনিধি::
রামুতে গাড়ি চুরির অপবাদ দিয়ে পিকআপ চালক পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত মো. হানিফ (৩০) রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মধ্যমপাড়া এলাকার মো. আবদুল্লাহর ছেলে।
সোমবার, ১০ জানুয়ারি ভোরে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়া এলাকায় চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে থেকে মো. হানিফের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত ইয়াসির নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানিয়েছেন- গাড়ি চুরির অপবাদ দিয়ে হানিফকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মৃতদেহে মারধরের অনেক আঘাত রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ১ জনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যান্যদের আটকের চেষ্টা চলছে। তিনি আরো জানান- মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে রাতে দাফন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা রুজু করা হবে।
নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- নিহত হানিফ রামুর চাকমারকুল ইউনিয়নের কলঘর বাজার এলাকার মৃত জহির আলমের ছেলে জোবায়ের এর মালিকানাধিন পিকআপ চালাতেন। ১০/১২দিন পূর্বে গাড়িটি চুরি হয়ে যায়। চুরির পর থেকে মাদকাসক্ত জোবায়ের ও তার সহযোগিরা গাড়ি চুরির অপবাদ দিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো। হানিফ কলঘর এলাকায় একটি ভাড়াবাসায় স্বরিবারে বসবাস করতো। হানিফের স্ত্রী একটি ইটভাটায় শ্রমিকদের রান্নার কাজ করতেন।
গত ৮ জানুয়ারি হানিফকে জোবায়েরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পিকআপ মালিক জোবায়েরসহ আরো কয়েকজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি হানিফকে চুরি হওয়া গাড়ির সন্ধান চেয়ে কয়েকদিন ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হলে কৌশলে মৃতদেহ রামুর পশ্চিম মেরংলোয়া এলাকায় ফেলে দেয়।
সোমবার ভোরে ওই এলাকায় সড়কের পাশে হানিফের রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে অবহিত করে। হানিফের স্ত্রী জাহেদা বেগম ও মা নুরুচ্ছাফা বেগমসহ স্বজনরা ঘটনাস্থলে এসে মৃতদেহ শনাক্ত করেন।
রামু থানা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি পৃথক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। রামু থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম জানান, মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মৃত ব্যক্তির শরীরে রক্তাক্ত একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। উদ্ধারের পরই মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়।
মৃতদেহ উদ্ধারের সময় উপস্থিত এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান- গত শনিবার (৮ জানুয়ারি) জুবায়ের ও তার লোকজন হানিফকে প্রকাশ্যে মারধর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। তাদের ধারনা-জুবায়ের পরিকল্পিতভাবে হানিফকে হত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য অভিযুক্ত জোবায়ের এর সাথে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নিহত হানিফের মা নুরুচ্ছাফা বেগম জানান- গাড়ি চুরির অপবাদে তার ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। জানা গেছে- নিহত হানিফ ১ মেয়ের জনক। বর্তমানে তার স্ত্রী জাহেদা বেগম অন্তঃসত্ত¡া।
বর্বরোচিত এ হত্যাকান্ডে ক্ষোভে ফুসে উঠেছে এলাকাবাসী। সর্বস্তুরের জনতা দরিদ্র পিকআপ চালক হানিফ হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেছেন।