সোয়েব সাঈদ, রামু::
বাল্য বিবাহ নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এটি এখন সামাজিক সমস্যা নয়, এটি গর্হিত অপরাধ। বাল্য বিয়ের ফলে একটি মেয়ের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। পৃথিবীকে চেনার আগে মুখোমুখি হতে হয় অনেক কঠিন ও অনাকাংখিত পরিস্থিতির। সন্তান ধারণে মৃত্যুর পাশাপাশি মায়েরও মৃত্যু হতে পারে। এ কারণে বাল্য বিবাহ অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। বাল্য বিয়ে দেয়ার চাইতে একটি মেয়েকে বস্তাবন্দি করে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া অনেক ভালো। বাল্য বিয়েতে জড়িত হলে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। তাই অভিভাবকদের বাল্য বিয়ে বন্ধে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাল্য বিয়েতে জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
রামুতে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সেমিনার ও সচেতনতামূলক নাটিকা প্রদর্শন অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা এ কথা বলেন। সবাই যদি হই একজোট, বাল্য বিবাহ হবে প্রতিরোধ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে কমঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) ফুড ফর দি হাংরী ইন্টারন্যাশনাল (এফ এইচ এসোসিয়েশন) খুনিয়াপালং কমিউনিটির আয়োজনে পালং কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এফ এইচ এসোসিয়েশনের এরিয়া প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারুক আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- রামু উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা জেসমিন পপি, রামু উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উম্মে সুরাইয়া আমিন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. অসীম বরন সেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা রহমান, ধেছুয়াপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ওসমান গনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- রামু উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নুরে আলম মজুমদার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবু শামীম, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবুল কালাম, রামু প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ, খুনিয়াপালং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুল্লাহ বিদ্যুৎ (এমইউপি)।
অনুষ্ঠানে রামু উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা জেসমিন পপি বলেন- অনেক অভিভাবক মেয়েকে বোঝা মনে করে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন। অথচ সুশিক্ষিত মেয়েরা কখনো সমাজে বোঝা হয়না। বরং শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে একজন মেয়ে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের উপযোগি হন এবং দেশ ও সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখার সুযোগ পান। সংসার জীবনেও সুশিক্ষিত নারীরা সফলতা এনে দেয়।
সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, দারিদ্রতা, অভাব অনটন কুসংস্কার ও সুশিক্ষার অভাবে ১৮ বছরের আগেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাল্য বিবাহের কারণে মাতৃ মৃত্যু হার ও শিশুর মৃত্যুর হার বাড়ছে। তাই সবাইকে সচেতন হয়ে মেয়েদের সুশিক্ষিত করতে হবে। সরকার মেয়েদের শিক্ষা অর্জনে নানাবিধ সুযোগ দিচ্ছে।
সেমিনারে শেষ পর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরবন নাট্য থিয়েটারের নাট্যকর্মীদের পরিবেশনায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনামূলক নাটক ‘ময়নার মা’র স্বপ্ন’ পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, কাজী, সাংবাদিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণী পেশার ৩ শতাধিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এফএইচ এসোসিয়েশনের এরিয়া প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারুক আহমেদ জানান- ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা রেসপন্স প্রোগ্রাম কর্মসূচির আওতায় রামু উপজেলার খুনিয়াপালং এবং উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ও হলদিয়াপালং ইউনিয়নে কম্প্রিহেনসিভ ফ্যামিলি এন্ড কমিউনিটি ট্রান্সফরমেশন প্রোগ্রামের (সিএফসিটি) আওতায় স্বাস্থ্য শিক্ষা পুষ্টি ও ওয়াশ কর্মসূচিসহ অনগ্রসর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এফএইচ কাজ করে যাচ্ছে।