নেপিডো, ২৩ জুন – সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গৃহবন্দি থাকা মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিকে মুক্তি দিতে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত এই নেত্রীর কনিষ্ঠ ছেলে কিম অ্যারিস।
এমনকি তার মাকে সাহায্য করার জন্য বিশ্বকে আরও কিছু করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (২৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির কনিষ্ঠ পুত্র তার মাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিবিসি বার্মিজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিম অ্যারিস এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেছেন, ‘আমি আমার মাকে কারাগারে থাকতে দিতে পারি না’। এবং একইসঙ্গে সু চিকে সাহায্য করার জন্য বিশ্বকে আরও কিছু করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
বিবিসি বলছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর দেশটির সামরিক আদালতে সু চিকে বেশ কয়েকটি অভিযোগে অন্তত ৩৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। তখন থেকে মিয়ানমার কার্যত গৃহযুদ্ধের দিকে চলে গেছে এবং এর ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
ব্রিটিশ নাগরিক কিম অ্যারিস বলেছেন, সেনাবাহিনী তাকে তার মা বা তার স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি। তিনি বলেছেন, তিনি বার্মিজ দূতাবাস, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র অফিস এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তাদের কেউ সাহায্য করতে সক্ষম হয়নি।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সাথে নিজের প্রথম সাক্ষাৎকারে অ্যারিস বলেন, এর আগে, আমি মিডিয়ার সাথে কথা বলতে চাইনি বা খুব বেশি যুক্ত হতে চাইনি। এমনকি ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রায় ১৫ বছর ধরে তার মাকে আটকে রাখার সময়ও অ্যারিস সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি।
কিম অ্যারিস বলছেন, ‘আমার রাজনীতি থেকে দূরে থাকাই ভালো। আমার মা কখনোই চাননি যে আমি রাজনীতিতে জড়িত হই। কিন্তু এখন যেহেতু তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, এবং সেনাবাহিনী স্পষ্টতই যুক্তিযুক্ত কাজ করছে না, তাই আমি মনে করি- আমি যা চাই তা বলতে পারি।’
নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত অং সান সু চি ছিলেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণতন্ত্রের আইকনদের একজন। প্রায় ১৫ বছর আটক থাকার পর ২০১০ সালে তার মুক্তি মিয়ানমার এবং সারা বিশ্বে উদযাপন করা হয়েছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে মিয়ানমারে তার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নৃশংসতা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। নির্যাতিত এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে এবং এখন প্রতিবেশী বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে।
বিবিসি বলছে, সামরিক অভ্যুত্থানের আগে তার মায়ের বিরুদ্ধে সামনে আসা নানা সমালোচনা সম্পর্কে বিবিসির প্রশ্নের জবাব দেননি অ্যারিস। এর পরিবর্তে তার মায়ের বর্তমান দুর্দশার দিকে মনোনিবেশ করতেই পছন্দ করছিলেন তিনি।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে গৃহবন্দি থাকলেও অং সান সু চিকে গত বছর রাজধানীর একটি নির্জন কারাগারে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। গত দুই বছরে তার প্রায় কোনো খবরই পাওয়া যায়নি। তিনি অসুস্থ ছিলেন বলেও গুঞ্জন শোনা গেলেও সামরিক বাহিনী সেসব প্রতিবেদন অস্বীকার করেছে।
এই পরিস্থিতিতে কিম অ্যারিস মিয়ানমারের সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে বর্তমানে জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে দমন করতে সেনাবাহিনীর মারাত্মক অস্ত্র ও বিমান হামলার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই কিছু করা শুরু করতে হবে, যার মধ্যে সামরিক বাহিনীর ওপর যথাযথ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং এমনকি যারা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করছে তাদের সহায়তাও করতে হবে।
অবশ্য নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও মিয়ানমার অস্ত্র আমদানি এবং অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল আমদানি করা অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এরপর বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।
অং সান সু চিকে ইতোমধ্যেই ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও নিজের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগই অস্বীকার করেছেন সু চি।
তবে মিয়ানমারের জান্তা জোর দিয়ে বলেছে, সু চির বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ বৈধ এবং স্বাধীন আদালতের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সাজা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ২৩ জুন ২০২৩