বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

মগনামা-কুতুবদিয়া নৌ-রুটে খাস কালেকশনের নামে লুটপাট!

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া::

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামা লঞ্চঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল হয়ে কুতুবদিয়া লেমশীখালী দরবার ঘাট পারাপারের একমাত্র নৌ রুটে গত চার মাস ধরে খাস কালেকশনের নামে প্রতিদিন উত্তোলিত সিংহভাগ টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে স্থানীয় একটি অসাধু সিন্ডিকেট! ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারী টাকা মেরে লাভবান হচ্ছে স্থানীয় অসাধু সিন্ডিকেট। স্থানীয় কিছু অসাধু লোকজনের অপতৎপরতার কারণে চলতি বাংলা বছরের শুরুতে মগনামা লঞ্চঘাট থেকে কুতুবদিয়ার লেমশীখালী দরবার ঘাটে পারাপারের একমাত্র নৌ রুটটি ইজারা হয়নি। আর এ সুযোগে মগনামার একটি অসাধু সিন্ডিকেটের সদস্যরা খাস কালেকশনের নামে ‘অভিনব কৌশলে’ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন রকম মাথা ব্যথা নেই! কর্তৃপক্ষের এহেন উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, চলতি বাংলা সালে মগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল হয়ে কুতুবদিয়ার লেমশীখালী দরবার ঘাট পারাপারের একমাত্র নৌ রুটটি ইজারা হয়নি। বিগত বছর গুলোতে ওই নৌ রুট ইজারা হতো প্রায় কোটি টাকার উপরে। প্রতি বছর বাংলা মাসে ওই নৌ রুট পরবর্তী এক বছরের জন্য ইজারা হলে সরকার ইজারা গ্রহীতার কাছ থেকে ভ্যাটসহ প্রায় কোটি টাকার উপরে রাজস্ব পেতো। কিন্তু চলতি বছর ঘাটটি ইজারা না হওয়ায় সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার ব্যস্ততম নৌ রুট হচ্ছে মগনামা লঞ্চঘাট টু কুতুবদিয়া দরবার নৌ রুট। এ রুট দিয়ে প্রতিদিন হাজার মানুষ স্পীডবোট ও ড্যানিস বোট নিয়ে পারাপার করে। ড্যানিস বোটে পারাপারের সময় প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ৩০-৬০টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। আর অন্যদিকে স্পীডবোটে যাতায়াতে প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ১০০টাকা আদায় করা হয়। মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রেও গলাকাটা পরিবহন খরচ আদায় করা হয়। আর পারপার ও মালামাল পরিবহনের টাকা মগনামা লঞ্চঘাটে আদায় করা হয়। স্থানীয় আবুর হাসেম ও হানিফ নামের দুই ব্যক্তি গত চার মাস ধরে মগনামা লঞ্চঘাট দিয়ে দরবার ঘাটে পারাপারে যাত্রীদের কাছ থেকে খাস কালেকশনের টাকা আদায় করছে। প্রতিদিন প্রায় এক লক্ষ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খাস কালেকশনের টাকা আদায় করা হলেও পেকুয়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে তারা শুধু ১০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সরকারী কোষাগারে জমা দিয়ে থাকে। গত চার মাস ধরে খাস কালেকশন আদায় করার সময় কোন দিনই পেকুয়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মগনামা লঞ্চঘাটে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। আবুল হাসেম ও হানিফ নামের দুই ব্যক্তি স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকিটের নিয়ন্ত্রণে খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলন করছে। আর এসব টাকা ওই সিন্ডিকেটই ভাগ-বাটোয়ারা করে প্রতিনিয়তই গিলে খাচ্ছে। এভাবে সরকারী খাস কালেকশনের টাকা প্রতিনিয়তই লুটপাট হলেও এ নিয়ে কোন ধরনের মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

মগনামা ঘাটে খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলনকারী আবুল হাসেমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভূমি অফিস থেকে তিনি টাকা উত্তোলনের জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন। খাস কালেকশনের টাকা লুটপাটের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের কথা বলতে রাজি হননি। তবে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, মগনামা লঞ্চঘাটে আবুল হাসেম ও হানিফ নামের কাউকে খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

মগনামা টু কুতুবদিয়া দরবার নৌ রুটের পাটনী মো: মকছুদ মিয়া অভিযোগ করে জানান, গত চার মাস ধরে খাস কালেকশনের নামে উত্তোলিত বেশিরভাগ সরকারী টাকা গনিমতের মালের মতো স্থানীয় একটি অসাধু সিন্ডিকেট লুটপাট করছে। খাস কালেকশনের সময় পেকুয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকেনা। ভূমি অফিসের লোকজনের অনুপস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট মগনামা লঞ্চঘাট থেকে উত্তোলিত সরকারী খাস কালেকশনের টাকা দেদারসে লুটে নিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। খাস কালেকশনের সময় ভূমি অফিসের লোকজনের উপস্থিতি নিশ্চিত করণের জন্য জেলা প্রশাসকের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন মকছুদ মিয়া।

এ বিষয়ে পেকুয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার কাজল কুমার শীল এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সদ্য বদলী হওয়া ইউএনও মগনাম টু কুতুবদিয়া দরবার ঘাট নৌ রুটে পারপারে যাত্রীদের কাছ থেকে খাস কালেকশনের টাকা উত্তোলনের জন্য মগনামার কয়েকজন লোককে দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন তিনি এতটুকু জানেন। মগনামা ঘাটে খাস কালেকশনের টাকা লুটপাটের বিষয়টি স্বীকার তহশিলদার আরো জানান, তিনি জরুরী ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। খাস কালেকশনের নামে সরকারী টাকা আত্মসাতে কোন ব্যক্তি বা সিন্ডিকেটকে সুযোগ দেওয়া হবেনা বলে তিনি হুশিয়ারী দিয়েছেন।


আরো খবর: