শিরোনাম ::
ঈদের দিন স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল যুবকের দোষীদের বিচার নিশ্চিত করা এনসিপির প্রধান এজেন্ডা বুলেটপ্রুফ বারান্দা থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন সালমান আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের মানুষের গণদাবি যে কারণে হুইলচেয়ারে বসে প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে মোশাররফ করিম খুশির ঈদে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও রাহুল গান্ধী ইরান পরমাণু চুক্তিতে রাজি না হলে বোমা হামলার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প Gurley Air Permeability Tester: Unraveling the Science and Applications ঈদুল ফিতরে নবিজির (সা.) ১০ আমল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত
মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৪ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

ভ্রমন পিপাসু পর্যটক দর্শনার্থীদের বরণ করতে প্রস্তুত ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

রোজার ঈদের টানা ছুটিতে

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

আসন্ন রোজার ঈদের টানা ছুটিতে ভ্রমন পিপাসু পর্যটক দর্শনার্থীদের বরণ করতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক। ইতোমধ্যে ঈদের ছুটিতে পর্যটক দর্শনার্থীদের আগমন ও নিরবিচ্ছিন্ন ভ্রমন নিশ্চিত করতে সাফারি পার্কের পর্যটন স্পটসমুহকে নান্দনিকরুপে সাজানোর পাশাপাশি টুরিস্ট পুলিশের সহায়তায় সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্কের রেঞ্জ অফিসার মো. মনজুর আলম।

জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের অবস্থান কক্সবাজার শহর থেকে ৪৭ কিলোমিটার উত্তরে। শতবর্ষী গর্জন বনের ভেতরে লোহার বেষ্টনীতে বসবাস করছেন বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীকূল। প্রাণী হলেও যাতের মমতায় বেড়ে উঠছে মানে পরিচর্যাকারী কেয়ারটেকারদের ডাকে সাড়া দেয় খাঁচায় আবদ্ধ বাঘ-সিংহ।

বেষ্টনীর ভেতরে খেলাধুলা আর হুংকার ছেড়েই সময় পার করা এসব প্রাণী যা দেখে আনন্দ পান পার্ক ভ্রমনে আগত দর্শণার্থীরা। ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু হয় ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের। তাঁর আগে ১৯৮০ সালে এটি ছিল হরিণ প্রজননকেন্দ্র। ভেতর-বাইরে ৯০০ হেক্টর আয়তন বনের জমি নিয়ে যাত্রা করা দেশের প্রথম সাফারি পার্কে বিপুল পরিমাণ মাদার ট্রিসহ (গর্জন) আছে নানা প্রজাতির বনজ গাছ।

সাফারি পার্ক হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের গেজেটভুক্ত হবার আগে থেকেই সবুজের সমারোহে দৃষ্টিনন্দন পার্কটি প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে বিনোদনের অনুষঙ্গ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই পার্ক থেকে প্রকৃতিবিষয়ক জ্ঞান আহরণ করতে পারে। সপ্তাহের মঙ্গলবার ছাড়া বাকি ছয় দিন ভ্রমন পিপাসু পর্যটক দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাসে, প্রাণীকূলের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে পার্কের সর্বত্র।

সাফারি পার্কের শুরুতে প্রাপ্তবয়স্করা ৫০ টাকা আর ৫ বছরের বড় শিশু-কিশোররা ৩০ টাকার টিকিটে পার্ক দর্শন করতে পেরেছেন এতদিন। কিন্তু অবকাঠামোগত মেগাউন্নয়নের বদৌলতে সাফারি পার্কের দৃশ্যমান সৌন্দর্য বর্ধনের কারণে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের মে মাসের নতুন প্রজ্ঞাপনে দর্শনার্থী প্রবেশ ফি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিজনের প্রবেশ ফি ১০০ টাকা ও শিশু কিশোরদের জন্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাফারি পার্কে ভ্রমনে গিয়ে হাঁটতে অক্ষম দর্শণার্থী চাইলে নির্ধারিত ফি দিয়ে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব মিনিবাসে করে পার্ক ঘুরে দেখতে পারেন।

সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, পার্কে দেড় ডজন বেষ্টনীতে সংরক্ষিত প্রাণীকূলে কঠোর নিরাপত্তায় পালিত হচ্ছে হাতি, বাঘ, সিংহ, জলহস্তি, গয়াল, আফ্রিকান জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট, ভাল্লুক, বন্য শূকর, হনুমান, ময়ূর, স্বাদু ও নোনা পানির কুমির, সাপ, বনগরুসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির প্রাণী।

পার্কজুড়ে আরও আছে চিত্রা, মায়া, সম্বর ও প্যারা হরিণ। আছে জানা-অজানা বিচিত্র ধরনের কয়েকশ’ ধরনের পাখি। ৫২ প্রজাতির ৩৫০ প্রাণী পার্কে দেখা মেলে। উন্মুক্তভাবে আছে ১২৩ প্রজাতির এক হাজার ৬৫ প্রাণী। এর মধ্যে গুইসাপ, শজারু, বাগডাশ, মার্বেল ক্যাট, গোল্ডেন ক্যাট, ফিশিং ক্যাট, খেঁকশিয়াল, বনরুই উল্লেখযোগ্য।

হেঁটে কিংবা গাড়িতে করে পার্ক ভ্রমণের সময় অসংখ্য বানর, শিয়াল, খরগোশ, হরিণসহ বন্যপ্রাণীর দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়। দেখা মেলে কালের সাক্ষী বিশালাকার দুর্লভ ও মূল্যবান বৃক্ষরাজির। সেসব গাছ ও দেয়ালে দেয়ালে বানরের লাফালাফি নজর কাড়ে সবার। এসব দৃশ্য মোবাইল ফোন ক্যামেরায় বন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দর্শনার্থীরা।

সাফারি পার্কের প্রাণীকূলের চিকিত্সার জন্য রয়েছে ভেটেরিনারি হাসপাতাল। যেখানে সার্বক্ষণিক আছে প্রাণী চিকিৎসক। প্রতিদিন সাফারি পার্ক ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণ থাকে বাঘ ও সিংহের বেষ্টনী। বাঘের দৌড়ঝাঁপ দেখে আনন্দে মাতেন দর্শনার্থীরা।

ইতোমধ্যে পার্কের ভেতরে বাঘ-সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণীদের জন্য নিরাপদ বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। বাঘ-সিংহের জন্য শত একর জমির আলাদা সাফারি ও জেব্রা, গয়াল, হরিণসহ অন্যপ্রাণীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে কয়েকশ’ একর এলাকা।

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক ও বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) ইয়াসিন নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, বেষ্টনী অনুসারে সাফারির চারপাশে তৈরি হয়েছে নিরাপদ পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ পথ। গড়া হয়েছে প্রবেশ-বাহিরের জন্য স্বয়ংক্রিয় ফটক, যান চলাচলে উপযুক্ত পাকা সড়কও। বাঘ-সিংহসহ হিংস্র প্রাণী বনে মুক্ত করে দেওয়া হলে খাঁচাযুক্ত গাড়িতে দর্শনাথীর্রা সংশ্লিষ্ট বেষ্টনীতে ঢুকে বিচরণরত বাঘ-সিংহ অবলোকন করেন। পুরো সাফারি পার্ক দেখার জন্য তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক ও সুউচ্চ পর্যবেক্ষন টাওয়ার। ইচ্ছা করলে পর্যটক দর্শনার্থীরা টাওয়ারে উঠে এক মুহূর্তের মধ্যে সাফারি পার্কের অপরুপ সৌন্দর্য দর্শন করতে পারবেন।
তিনি বলেন, সাফারি পার্কের বাইরে পার্কিং লাগোয়া এলাকায় সাজানো ফুল বাগান। পার্কের দক্ষিণে গড়ে তোলা হয়েছে পিকনিক স্পট, শিশু বিনোদন কেন্দ্র। এরই দক্ষিণে পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক।
মেগাউন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পার্কের প্রবেশপথের পুরানো ফটক ভেঙে দৃষ্টিনন্দন করে তৈরি করা হয়েছে নতুন প্রবেশ ফটক। প্রশস্ত করা দু’পাশের দুই লেনের সড়কের ফুটপাতে বসেছে টাইলস। গোছালো সুপরিসর টিকিট ঘর, পর্যটকদের লাগেজ ও প্রয়োজনীয় মালামাল রাখার লকার রুম হয়েছে। সাথে তৈরি হয়েছে ব্রেস্টফিডিং ও দর্শনার্থী অপেক্ষা কক্ষও।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে উন্নয়ন কাজের বদৌলতে নতুনত্ব পেয়েছে ডরমেটরি ও ব্যারাক। আধুনিক মানের ওয়াশরুমে প্রফুল্ল দর্শণার্থীরা। সংস্কার হয়েছে পার্কের মাঝখানের শতাধিক ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। চলমান আছে বাচ্চাদের বিনোদনে আলাদা অ্যামিউজিং পার্ক ও পার্কে দর্শনার্থী প্রবেশ-বাহির পথ তৈরির কাজ।

জানা গেছে, আবদ্ধ ও উন্মুক্ত প্রাণি এক বেষ্টনী হতে অন্য বেষ্টনী পর্যন্ত সহজে যেতে তৈরি হয়েছে সংযোগ সড়ক। অতিরোদ পড়া বেষ্টনীগুলো ছায়া ঘেরা পরিবেশে স্থানান্তর করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে সুনিপুণ অবকাঠামো। এখন সহজে বিশাল পার্কে ঘোরা যায়।

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক ( রেঞ্জ কর্মকর্তা মনজুর আলম বলেন, প্রতিষ্ঠার দুই যুগে এসে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক এই অঞ্চলের মানুষের বেড়ানো ও বিনোদনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদের পাশাপাশি এখানে বার্ষিক পিকনিক করতে আসছে অনেক শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকারের বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে পার্কের বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাফারি পার্কের অতীব ‘প্রয়োজনীয় অনেক কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, কিছু কাজ সমাপ্তের পথে-তাও দ্রুতগতিতে এগুচ্ছে। চলতি অর্থবছরের শেষের দিকে আমরা সে লক্ষ্য ছুঁতে পারব বলে আশা করছি।’

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনজুর আলম বলেন, এবারের রোজার ঈদে দেশ বিদেশি পর্যটক দর্শনার্থী আগমন নিশ্চিত করতে আমরা সাফারি পার্ককে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছি।ফলে ঈদের টানা ছুটিতে দর্শনার্থীরা সাফারি পার্ক দর্শনে এসে খুব মনোরম পরিবেশে প্রাকৃতিক দৃশ্য গুলো উপভোগ করতে সক্ষম হয়। এছাড়া এ রোজার ঈদের বাকী আরো কয়েকদিন ছুটিতে পার্কে এসে ভালো কিছু উপভোগ করবেন বলে আশা করি। মঙ্গলবার সরকারি ভাবে পার্ক বন্ধ থাকলেও যদি এবারের রোজার ঈদ মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে উর্বধতন কতৃপক্ষের নির্দেশক্রেম বিশেষ ব্যবস্থায় ওইদিন সাফারি পার্ক খোলা রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, সাফারি পার্কের নিরাপত্তা নিয়ে টুরিস্ট পুলিশ আলাদা ভাবে কাজ করছেন। তারপরও রোজার ঈদে পর্যটক দর্শনার্থীদের নিরবচ্ছিন্ন ভ্রমন নিশ্চিত করতে থানা পুলিশের ইউনিট সবধরনের সহায়তা দেবে।

কীভাবে পৌঁছাবেন ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে?
বাসে করে ঢাকা-কক্সবাজার যাওয়ার পথে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা নামক স্থানেই নেমে পড়ুন। প্রধান সড়ক হতে মাত্র ৩৫০ গজ পূর্বেই এই পার্কের অবস্থান। আবার কক্সবাজার থেকে বাসে করে ডুলাহাজারা গিয়েই সাফারি পার্ক পরিদর্শন করতে পারেন।
ডুলাহাজারা থেকে কক্সবাজার শহরের দূরত্ব মাত্র ৪৭ কিলোমিটার। পার্ক পরিদর্শন করে যে কোনো বাসে চড়ে মাত্র ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে কক্সবাজার পৌঁছাতে পারেন। সেখানে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপনের সুযোগ আছে। #


আরো খবর: