বিশ্ববাজারে কমেছে ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, চাল, চিনি, গম ও সোনাসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম। বিশ্ববাজারের অজুহাতে বাংলাদেশে দাম বাড়লেও নিম্নমুখী দাম নিয়ে আওয়াজ নেই ব্যবসায়ী মহলে। ফলে নিত্যপণ্য নিয়ে বিশ্ববাজারে স্বস্তির বাতাস বইলেও অসহায়ত্ব কমছে না বাংলাদেশের ক্রেতাদের। তাই বাজারে এসে তীব্র বিরক্ত প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
বিশ্বব্যাংক প্রতি মাসের শেষে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রধান প্রধান পণ্যের দাম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত জুন থেকে আগস্টে নিম্নমূখী বাজার দরের ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুন ও জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে।
তেলের বাজার দর নিয়ে বিশ্বব্যাংক জানায়, জুনে পাম তেলের দাম ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৫০১ মার্কিন ডলার, তা আগস্টে ৪৭৫ ডলার কমে ১ হাজার ২৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সয়াবিন তেলের দামও কমেছে। জুনে সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি ১ হাজার ৭৫২ ডলার ছিল, তা আগস্টে ১৫৩ ডলার কমে ১ হাজার ৫৯৯ ডলারে অবস্থান করে।
চিনির দাম উল্লেখ করে জানানো হয়, জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম প্রতি টন ছিল ২৪২ ডলার, মার্চে তা ৩ ডলার কমে ২৩৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া চাল ও গমের বাজার নিয়ে বলা হয়, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে চালের দাম কমেছে। জুনে থাইল্যান্ডে প্রতি টন ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম ছিল ৪৪৪ ডলার, যা মার্চে ১৩ ডলার কমে বেড়ে ৪৩১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ২৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম প্রতি টন ২০ ডলার কমে ৪৪১-৪২১ ডলার হয়েছে। একই সময় গমের বাজারেও নিম্নমুখী দাম দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ গমের দাম জুনে ছিল টনপ্রতি ৪৬৯ ডলার, যা ৮৭ ডলার কমে ৩৮২ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
করে।
এ নিয়ে ক্যাবের নির্বাহী সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজার মনিটরিং নিয়ে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। অন্যথায় সরকার তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। আর এর দায় একমাত্র ব্যবসায়ীদের নিতে হবে। তারা দেশে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববাজারের অজুহাতে কথায় কথায় তারা দাম বাড়ায়। অথচ বিশ্ববাজারে দাম কমলে তারা খবরও রাখে না। তাই সরকারকে শক্ত হয়ে এই ক্রাইসিস মুমেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেশি থাকলে তার নেতিবাচক প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে বাধ্য। কারণ বাংলাদেশ ভোজ্যতেল, চিনি ও জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করছে। বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকলে স্বাভাবিকভাবে আমদানি খরচ কমবে। দেশের বাজারেও কয়েক মাসের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমে আসা নিয়ে নতুন সংকটের পূর্বাভাস দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক এম ড. সেকান্দার খান বলেন, বিশ্ববাজারের এখনকার নিম্নমুখী প্রবণতার মূল কারণ মন্দার পূর্বাভাস। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর ফলে ভোগের চাহিদা কমে যাচ্ছে। মন্দা হলে তখন বাংলাদেশের রপ্তানি খাত নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হবে। অবশ্য খুব বড় মন্দা হতে পারে।