বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩২ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

ভারতে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি নিয়ে নিন্দার ঝড়

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
ভারতে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি নিয়ে নিন্দার ঝড়


নয়াদিল্লি, ১৪ ফেব্রুয়ারি – ভারতের আয়কর কর্মকর্তারা মঙ্গলবার সকালে হানা দেন বিবিসির দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের কার্যালয়ে। তা নিয়ে শুরু হয়েছে দেশজুড়ে রাজনৈতিক। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ চালু করেছে মোদী সরকার। তাই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারও রুদ্ধ হচ্ছে। এ সবের মধ্যেই বিবিসি তদন্তে সমস্ত রকম সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে।

সম্প্রতি বিবিসির একটি দুই পর্বের তথ্যচিত্র প্রদর্শন ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। বিবিসির এই তথ্যচিত্রকে বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে সরকার তার সম্প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। সামাজিকমাধ্যম থেকেও সরকারের চাপে তুলে নেয়া হয় তথ্যচিত্রটি।

যদিও ডিজিটাল দুনিয়ায় এ ভাবে তথ্যচিত্রের প্রদর্শন ঠেকানো যায়নি। দেশের ছাত্রসমাজ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তা প্রদর্শনের ঢালাও ব্যবস্থা করে। বহু মানুষ সেই তথ্যচিত্রটি দেখেন। এ বার সেই রেশ কাটতে না কাটতেই বিবিসির ভারতের দুইটি অফিসে আয়কর হানা চলল। তা নিয়ে নতুন করে দানা বেধেছে বিতর্ক। পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এডিটর্স গিল্ডও।

বিবিসির দিল্লি, মুম্বইয়ের অফিসে আয়করের হানা নিয়ে বিজেপির দাবি, বিবিসি ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা’। পাশাপাশি মোদি, শাহের দল এই প্রসঙ্গেই কটাক্ষে বিঁধেছেন কংগ্রেসকে।

বিজেপি মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া বলেন,ভারতে যে সমস্ত সংস্থা বা সংগঠন কাজ করছে তাদের ভারতের আইনশৃঙ্খলা মেনে চলতেই হবে। বিবিসি যদি সমস্ত আইন মানে তা হলে ভয় কিসের? বিবিসি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা। বিবিসির কার্যপ্রণালীর সঙ্গে কংগ্রেসের খুব মিল।

আয়কর দফতরের অভিযান নিয়ে বার্তা এসেছে বিবিসির পক্ষ থেকেও। সংবাদমাধ্যমটি টুইট করে জানিয়েছে, তারা আয়কর দফতরের সঙ্গে সমস্ত রকম সহযোগিতা করছে। দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ারও আশা করছে সংস্থাটি।

এদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে এ নিয়ে আক্রমণে কমতি রাখছেন না বিরোধী নেতানেত্রীরা। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র টুইটে বিবিসি অফিসের আয়কর অভিযান নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। তার প্রশ্ন, বিবিসির অফিসে যে আয়কর হানা হয়েছে, তা নিয়ে কেউ কেউ বিস্মিত। কিন্তু বিস্ময়ের সত্যিই কি কোনও কারণ আছে?

একই সুরে সিপিএমের তরুণ সাংসদ জন ব্রিটাসের প্রশ্ন, এটা কি সত্যিই প্রত্যাশিত ছিল না? ঋষি সুনাক এ বার কী বলেন, তার দিকে তাকিয়ে আছি।

সিপিআই সাংসদ বিনয় বিশ্বমের টুইট, বিবিসিতে হানা! ওরা এটাকে বলছেন সমীক্ষা! এই সমীক্ষা আসলে সত্যি গোপন করার মরিয়া চেষ্টা ভীতসন্ত্রস্ত সরকারের। গোটা বিশ্ব তা দেখছে। মোদি যখন জি-২০-এর সভাপতিত্ব করবেন, তখন কি তাকে ভারতের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন করা হবে? তিনি কি সত্যি এর জবাব দিতে পারবেন?

সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদবের টুইট, শাসন-প্রশাসন যখন অভয় এবং নির্ভয়ের জায়গায় ভয় এবং উৎপীড়নের প্রতীক হয়ে ওঠে, তখন বুঝবেন এর শেষ নিকটে চলে এসেছে।

দেশের দুই শহরে বিবিসির আয়কর হানার সমালোচনা করেছেন উদ্ধব শিবিরের শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত, পিডিপির মেহবুবা মুফতিও। সঞ্জয়ের অভিযোগ, বিবিসির অফিসে আয়কর হানার সময় নির্বাচনই বলে দিচ্ছে, গোটা বিশ্বে ভারতের গণতন্ত্র সম্পর্কে কী বার্তা পৌঁছচ্ছে।

ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১১টায় আয়কর বিভাগে ৬০-৭০ জনের একটি দল দিল্লি অফিসে পৌঁছায়। সেই সময় অফিসে উপস্থিত থাকা সংবাদকর্মীদের মোবাইল ফোন জমা রেখে দেন আয়কর কর্মকর্তারা। তার পর চলে তল্লাশি এবং অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারও সঙ্গে তথ্য শেয়ার না করতে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে তল্লাশি শেষ হলে ফোন ফেরত দেয়া হয়।

প্রথমে মনে করা হয়েছিল, শুধুমাত্র বিবিসির দিল্লির অফিসেই হানা দিয়েছে আয়কর দপ্তর। পরে জানা যায়, মুম্বইয়ের অফিসেও ঢুকে সমীক্ষা চালাচ্ছে তারা।

এদিকে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, কর ফাঁকির তদন্তের অংশ হিসাবে দিল্লি এবং মুম্বাইতে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) অফিসে একটি জরিপ চালিয়েছে।

একজন সিনিয়র কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের কিছু স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন ছিল এবং তার জন্য আমাদের দল বিবিসি অফিসে গেছে এবং আমরা একটি জরিপ চালাচ্ছি। আমাদের কর্মকর্তারা অ্যাকাউন্ট বই ও কাগজপত্র পরীক্ষা করতে গেছেন, এগুলো কোনো তল্লাশি নয়।

কর্মকর্তারা দাবি করেছেন বিভাগটি কেবল তার ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ এবং আন্তর্জাতিক কর ও স্থানান্তর মূল্যের অনিয়মে বিবিসির বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩





আরো খবর: