শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

বিশেষ নামাজ-রোজায় ওসি প্রদীপের ফাঁসি কামনা

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২

জাগো নিউজ::

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়েছে গত ১২ জানুয়ারি। যুক্তিতর্ক শেষে ৩১ জানুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল। এরপর থেকেই দিনটির জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে মানুষ।

বিশেষ করে মামলার ২ নম্বর আসামি ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ দাশের অপশাসনে ক্ষতিগ্রস্ত টেকনাফবাসীর প্রতীক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না। সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির কী ধরনের সাজা হবে, তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই জনমনে।

টেকনাফ থানার ওসি থাকাকালে প্রদীপের রোষানলে নির্যাতিত শত শত পরিবারের চাওয়া একটাই—প্রদীপ ও তার সহযোগীদের যেন ফাঁসি হয়। শুধু তাই নয়, রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের পর থেকেই বিশেষ প্রার্থনা ও রোজা রেখে ওই দোয়াই করছে টেকনাফের অসংখ্য ভুক্তভোগী পরিবার।

তবে, মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের কামনা—প্রধান দুই আসামি প্রদীপ কুমার-লিয়াকতের সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক। বাকি আসামিদের সাজা হোক যার যার অপরাধের ভিত্তিতে। এর মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

শারমিন শাহরিয়ার বলেন, ‘অপরাধী যেই হোক না কেন, অপরাধ করলে কেউ আইন ও সাজার হাত থেকে রেহাই পায় না—এ রায়ের মাধ্যমে সেটিই প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’

সূত্র মতে, প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ ওসি থাকাকালে মাদক নির্মূলের নামে ২২ মাসে ১৪৪টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার জন্ম দেন। তাতে মারা গেছেন ২০৪ জন। নিহত সবাইকে দেওয়া হয়েছে ‘মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের তকমা’।

স্থানীয়দের মতে, ক্রসফায়ারে নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ছিলেন নিরীহ। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ‘সন্ত্রাসী তাকমা’ দিয়ে একই পরিবারের তিন ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করার অভিযোগ আছে প্রদীপের বিরুদ্ধে।

ওই পরিবারের সদস্য মুহাম্মদ আলম বলেন, ‘খুনের শিকার’ তিন ভাইয়ের স্ত্রী এবং এতিম সন্তানরা কামনা করছে তাদের অভিভাবকদের হত্যায় জড়িত ওসি প্রদীপ ও অন্যদের যেন ফাঁসি হয়। এটি নিশ্চিত হতে তারা প্রতি সোম ও শুক্রবার রোজা রেখে তাহাজ্জুদ নামাজসহ বিশেষ প্রার্থনায় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছেন।

তাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে তার তিন ভাইকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে জড়িতের বেশ কয়েকজন সিনহা হত্যা মামলায় আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

টেকনাফের ওসি থাকাকালীন নিজের দুই মেয়েকে প্রদীপ ‘ধর্ষণ’ করেছেন দাবি করে এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, মেজর সিনহা হত্যার রায়ের দিন নির্ধারিত হওয়ার পর থেকে তিনি প্রদীপের ফাঁসি কামনা করছেন। এজন্য তিনি রোজা রাখছেন ও সালাতুল হাজতের নামাজ আদায় করে যাচ্ছেন।

ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে মামলা করলেও এখনো পর্যন্ত মামলার কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাননি বলে উল্লেখ করেন এ নারী।

টেকনাফ হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা জাহেদুল ইসলাম জানান, ‘মাদকের তকমা’ দিয়ে তার এলাকায় প্রদীপ ১৬ জনকে হত্যা করেছেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রায় সবাই নিরীহ ও নিতান্তই গরিব। এসব পরিবারের সদস্যরা এখন প্রদীপের ফাঁসির কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করছেন বলে জানতে পেরেছেন তিনি।

প্রদীপের অপকর্মের সংবাদ প্রচার করায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হন কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। তিনি বলেন, মাফিয়া ইয়াবা কারবারির হয়ে কয়েকশ পরিবারকে নির্যাতন করেছেন প্রদীপ ও তার সহযোগীরা। এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন করায় আমাকে ঢাকা থেকে ধরে এনে অস্ত্র, বিদেশি মদ ও ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়া হয়। এর আগে চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। চোখে মরিচের গুঁড়া দেওয়া হয়।

সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা বলেন, ‘আমরা চাই প্রদীপের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হোক। সিনহা হত্যায় তার ফাঁসির রায় হলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।

এক নজরে সিনহা হত্যা মামলা ও বিচার কার্যক্রম

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি এবং রামু থানায় একটি মামলা করে। সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং মাদক আইনে এসব মামলা হয়। টেকনাফ থানায় করা দুই মামলায় নিহত সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম সিফাতকে আসামি করা হয়। আর রামু থানায় মাদক আইনে করা মামলায় আসামি করা হয় নিহত সিনহার অপর সফরসঙ্গী শিপ্রা দেবনাথকে।

২০২০ সালের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন-টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, উপ-পরির্দশক (এসআই) টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা।

মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত করার পর আদালত তদন্তভার দেন র‌্যাবকে। একই সঙ্গে, পুলিশের করা মামলা তিনটিও মামলাও র‌্যাবকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন আদালত।

২০২০ সালের ৬ আগস্ট সকালে মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত করে তদন্তের জন্য র‌্যাবকে হস্তান্তর করা হয়। ওইদিন বিকেলে মামলায় অভিযুক্ত ৯ জনের মধ্যে ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ওইদিন পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, এসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা নামের কোনো পুলিশ সদস্য জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন না। ওইদিনই আত্মসমর্পণকারী আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

মামলার তদন্তকালীন ২০২০ সালের ১১ আগস্ট গ্রেফতার করে পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী টেকনাফের মারিশবুনিয়া এলাকার মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আয়াজ ও নিজাম উদ্দিনকে আদালতে সোপর্দ করে র‌্যাব। ওইদিনই তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মামলা তদন্তের এক পর্যায়ে ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট এপিবিএনের (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) তিন সদস্য সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহজাহান মিয়া, কনস্টেবল মো. রাজীব ও কনস্টেবল মো. আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে র‌্যাব। ওইদিনই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হয়।

২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর র‌্যাব কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ওইদিনই রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

কারাগারে থাকা এই ১৪ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এদের মধ্যে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর র‌্যাব-১৩ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৪ জন কারাগারে থাকলেও টেকনাফ থানার কনস্টেবল সাগর দেব পলাতক ছিলেন। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে। একইদিন পুলিশের করা মামলা তিনটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই সঙ্গে পুলিশের করা তিনটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলা থেকে সাইদুল ইসলাম সিফাত ও শিগ্রা দেবনাথকে অব্যাহতি দেন আদালত।

এরপর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালত থেকে মামলাটির কার্যক্রম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের আদালতে বদলি হয়। ২০২১ সালের ২৪ জুন পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এতে আদালত ওইদিনই তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন। সেই সঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৬ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত দিন ধার্য করেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আদালতের বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় ধার্য দিনগুলোতে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি।

পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আট দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনদিনে দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় দফায় ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারদিনে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয় চার জনের। তৃতীয় দফায় ২০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনদিনে সম্পন্ন হয় আটজনের।

চতুর্থ দফায় ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্ব পর্যন্ত দুইদিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা করা হয় ছয়জনের। পঞ্চম দফায় ১০ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তিনদিনে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। ষষ্ঠ দফায় ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত তিনদিনে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয় ২৪ জনের।

সপ্তম দফায় ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিনদিনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ছয়জন সাক্ষ্য দেন। এদের মধ্যে পাঁচজনের জেরা সম্পন্ন হলেও তদন্ত কর্মকর্তার জেরা অসম্পন্ন ছিল। সর্বশেষ অষ্টম দফায় ২৯ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনদিনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জেরা সম্পন্ন হয়।

এরপর ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। সবশেষ ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় উভয়পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের শেষদিনে আদালত ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।

এছাড়া মেজর সিনহা নিহতের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গঠিত কমিটি তদন্ত শেষে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। তবে ওই তদন্ত প্রতিবেদনে কী ধরনের বিষয়বস্তু উল্লেখিত ছিল তা প্রকাশ পায়নি।

একই ইস্যুতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারসহ একযোগে দেড় সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যকে অন্যত্র বদলি করে তদস্থলে নতুন পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছিল।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ঘোষণা অনুসারে ৩১ জানুয়ারি সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। আমরা তার হত্যার বিষয়টি প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আমাদের আশা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন ওসি প্রদীপ ও অভিযুক্তরা। স্বল্প সময়ে সিনহা হত্যার রায় দেশে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


আরো খবর: