বাবা হত্যার বিচার চাইতে মানববন্ধনে ৮ মাসের শিশু
বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যার বিচার দাবিতে বক্তব্য রাখছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
পাশে মায়ের কোল থেকে অপলক দৃষ্টিতে বক্তাকে দেখছিল সাজ্জাদুজ্জমানের ৮ মাস বয়সী শিশু সাদিকা জামান মাভিসা। যেন বলতে চাইছে এই বক্তব্যে আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। যদি প্রিয় বাবাকে হারানোর শোক বুঝতে পারতো, তাহলে হয়তো শুধু মৌন সমর্থন নয় ক্ষোভ আর শোকও প্রকাশ করতো সে।
স্বামীর হত্যার বিচার চাইতে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন সাজ্জাদুজ্জামানের স্ত্রী মুমতাহেনা। কিন্তু পুরো সময়জুড়ে পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে অশ্রু ঝড়ালেও মুখ ফুটে একটি অক্ষর বলতে পারেননি তিনি। এক কথায় যাকে বলে অধিক শোকে পাথর হয়ে যাওয়া বা বাকরুদ্ধ।
তবে কথা বলেছেন নিহত সাজ্জাদুজ্জামানের বড় ভাই কামরুজ্জামান কাজল। তিনি বলেন, আমার ভাইকে আর ফিরে পাবো না কিন্তু আর কোন ভাইকে যেন এভাবে মরতে না হয় তার নিশ্চয়তা চাই। হত্যাকরীদের ফাঁসিরও দাবি করেন তিনি।
বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের মৃত্যুতে নিঃস্ব হয়ে পড়া স্ত্রীকে চাকরি প্রদান, সন্তানের ভবিষ্যত নিশ্চিত করা এবং সুবিচারের স্বার্থে মামলাটি র্যাবের কাছে হস্তান্তরেরও দাবি জানান তিনি।
সাজ্জাদ হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন ভবনের সামনে প্রতিবাদী নাগরিক সমাবেশ আয়োজন করে ২৩টি নাগরিক সংগঠন। এই সমাবেশে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
সমাবেশে সাজ্জাদুজ্জমানের শিক্ষক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার তার স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, সাজ্জাদুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যার পর উল্লাস করা হয়েছে যা কোন সভ্যসমাজে মেনে নেওয়া যায় না। হত্যাকারিদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাল তলোয়ার ছাড়া নিধুরাম সর্দার বানিয়ে বন রক্ষায় ছেড়ে দেওয়া সরকারের চরম ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বন রক্ষাকারিদের প্রয়োজনীয় প্রটেকশন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র প্রদান করতে হবে। বন রক্ষা করতে যারা নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে তাদের পরিবারে দায়িত্ব এবং যারা এ কাজে নিয়োজিত তাদের ঝুঁকি ভাতা চালুরও দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের সব চেয়ে সুন্দর জেলাটি আজ বন ও পাহাড় খেকোদের দ্বারা ধ্বংস প্রায়। বিচারহীনতার মাধ্যমে সরকার দখলদারদের লাগাম ছেড়ে দেওয়ায় আজ সরকারি কর্মকর্তাদের প্রাণ হারাতে হচ্ছে।
জামিনে মুক্ত ইউসুফরে হত্যাকারিদের পুনরায় গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো এবং সাজ্জাদুজ্জামানের হত্যাকারিদের দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তিনি। একইসাথে উভয়ের পরিবারের ভরণপোষণের সব দায়িত্ব সকরকারকে বহন করার জোর দাবি জানান।
সংহতি বক্তব্যে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, আমার কর্মকর্তা তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে এর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি। আমরা এর মামলা করেছি ১জন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। একই সাথে দেশের সকল বনে বন খেকোদের দৌরাত্ম্য বন্ধে আমাদের সকল কর্মচারি কর্মকর্তা দ্বিগুণ শক্তিতে কাজ শুরু করেছে। আমরা আর কোন ইউসুফ সাজ্জাদুজ্জামানকে হারাতে চাই না এই জন্য বন রক্ষকদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রদানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, গত রবিবার (৩১ মার্চ) প্রয়াত সাজাদুজ্জামান ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জ-এর আওতাভুক্ত রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় বনের জমি রক্ষা করতে গিয়ে ভূমি দস্যুদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন। উখিয়া রেঞ্জ এর হরিণমারা অংশ থেকে পাহাড় কেটে বালু সরবরাহ করার সময় একটি মিনি ট্রাক (ডাম্পার) সাজাদুজ্জামানকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এ ঘটনায় আহত হন আরো একজন বন কর্মকর্তা।