নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের রামুর পেঁচারদ্বীপ এলাকার চার স্কুলছাত্রের একজনেরও যাওয়া হলোনা সেন্টমার্টিন। রোহিঙ্গা অপহরণকারীদের খপ্পরে পড়ে ঠাঁই হয়েছিলো টেকনাফ শালবন পাহাড়ে। সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তুপে রাখা হয়েছিলো স্বপ্নকামী ৪ তরুণকে। পরে পেয়ারা বাগানে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক বেদড়ক মারধর করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পরিবারের নিকট কল করিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। অপহরণের শিকার চারজন হলেন রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পেঁচারদ্বীপ এলাকার মো. ফরিদুল আলমের ছেলে মিজানুর রহমান নয়ন (১৭),আব্দুস সালামের ছেলে জাহিদুল ইসলাম মামুন (১৮),আব্দুর রহিমের ছেলে কায়সার আহমেদ (১৭) ও আলমের ছেলে মিজান (১৮)।
অপহরণের পর বিষয়টি র্যাব-১৫ হোয়াইক্যং ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে অপহৃত স্কুলছাত্রদের পরিবার। উখিয়ার এক সাংবাদিকের সহযোগিতায় র্যাব-১৫ হোয়াইক্যং ক্যাম্প কমান্ডার মেজর ফারাবি’র নিকট অভিযোগ দায়ের করলে বিষয়টি সুক্ষ্মভাবে মাথায় নিয়ে অভিযান শুরু করে র্যাব।
অপহরণকারীদের মুক্তিপণ দাবির কথোপকথন প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিযান পরিচালনা করে প্রথমে একজন ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
পরে অপহরণকারীদের ধৃত করলে অপর দুই ভিকটিম পালিয়ে নিকটস্থ এপিবিএন কার্যালয়ে চলে আসে। সেখান থেকে ১৬ এপিবিএন দুজন ভিকটিমকে উদ্ধার করে। পরে নিখোঁজ অপর ভিকটিমকে উদ্ধার করতে রাতভর অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল। ভোরে শেষ পর্যন্ত চারজনই উদ্ধার হয়। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র্যাব-১৫ এর সহযোগিতায় সন্তানদের ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত পরিবারের স্বজনরা। অপহরণের সাথে জড়িত রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারী জাহাঙ্গীর ও জাবেদ সহ ৭জনকে আটক করা হয়েছে।
অপহরণের চারদিন পর উদ্ধার হওয়া মিজানুর রহমান নয়ন ও কায়সার জানান,গত ৭ ডিসেম্বর বিশ্বস্ত বন্ধু ইব্রাহীমের সাথে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য বের হলে সে তার সহযোগীদের সাথে নিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে সেখানে অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের আস্তানায় নিয়ে বেদড়ক মারধর করে পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ দিতে না পারলে হত্যা করা হবে বলে জানান পরিবারকে। র্যাব-১৫ এর সহযোগিতায় রোহিঙ্গা অপহরণকারীদের হাত থেকে জীবন রক্ষা পেয়ে পরিবারের নিকট ফিরে আসতে পারায় প্রশাসন সহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়।
শনিবার র্যাব-১৫ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লে. কর্ণেল খায়রুল ইসলাম সরকার জানান,সেন্টমার্টিন বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে ক্যাম্পে আটকে রেখে অপহরণকারী রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারী চক্র। পরে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় অপহরণকারী পরিবারের সাথে মুক্তিপণের টাকা দিতে যায় র্যাব সদস্যরা। পরে মুক্তিপণের টাকা নিতে এসে আটক হয় অপহরণকারী চক্রের এক সদস্য। ক্যাম্পে র্যাবের শক্ত অবস্থান টের পেয়ে অপহরণকারীরা পালিয়ে গেলে ভিকটিমদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। অভিযান চলাকালীন দুজন ভিকটিম পালিয়ে ক্যাম্পের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অফিসে চলে আসে। রাতভর অভিযান চালিয়ে পরেরদিন ভোরে একজনকে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে চারজনকে উদ্ধার করা হয়। অপহরণকারী চক্রের মূলহোতাদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।