পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার পেশোয়ারের মসজিদে সন্দেহভাজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। মঙ্গলবার পেশোয়ারের মসজিদে বিস্ফোরণস্থলে ধ্বংস্তূপের নিচ থেকে তার মাথা উদ্ধার করা হয় বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর আগে, সোমবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে যোহরের নামাজের সময় মসজিদে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেন এক হামলাকারী। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। দেশটির নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) মসজিদে হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতিতে দিয়েছে।
পেশোয়ারের পুলিশ লাইন্স এলাকার উচ্চ-নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতাধীন ওই মসজিদে টিটিপির হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২২১ জন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মসজিদের ধ্বংস্তূপের নিচে উদ্ধার অভিযান এখনও অব্যাহত থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নামাজের সময় সামনের সারিতে ছিলেন। সেখানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেন তিনি। এতে মসজিদের ছাদ ধসে মুসল্লিরা চাপা পড়ে যান।
পেশোয়ার পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আইজাজ খান জিও টিভিকে বলেছেন, বিস্ফোরণটি আত্মঘাতী হামলা বলে মনে হচ্ছে। সন্দেহভাজন বোমা হামলাকারীর বিচ্ছিন্ন মাথা মসজিদে বিস্ফোরণস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হামলাকারী বিস্ফোরণের আগেই পুলিশ লাইনে উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে প্রবেশ করার জন্য সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্ধার অভিযান শেষ হলে বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ আইজাজ খান। এই হামলার ঘটনায় খাইবার পাখতুনখোয়ার অন্তর্বর্তীকালীন মুখ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ আজম খান মঙ্গলবার প্রদেশটিতে এক দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
পাকিস্তানি তালেবান নামে পরিচিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) আত্মঘাতী ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে। দেশটির নিষিদ্ধ এই গোষ্ঠী বলেছে, গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে টিটিপি কমান্ডার উমর খালিদ খুরাসানি হত্যার প্রতিশোধে পেশোয়ারের মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে।
পেশোয়ার পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, মসজিদের একাংশ ধসে পড়েছে এবং কয়েকজন ধ্বংস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ২০০৭ সালে। আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন সশস্ত্র তালেবানগোষ্ঠীর মতোই পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে নিজেদের সরকার গঠন করতে চায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)।
পাকিস্তানজুড়ে শরিয়া আইন চালুর দাবিতে বেশ কয়েক বছর ধরে তৎপরতা চালিয়ে আসছে তেহরিক-ই-তালেবান। এর আগে কয়েকবার টিটিপি ও পাকিস্তানের সরকারের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে সেসব উদ্যোগ।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত উভয়পক্ষের অস্ত্রবিরতি কার্যকর ছিল।
পাকিস্তানের নারী শিক্ষা অধিকার কর্মী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইকে হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিতি পায় টিটিপি। রয়টার্সের তথ্যমতে, টিটিপির একের পর এক আত্মঘাতী হামলা ও বোমা হামলায় এরই মধ্যে পাকিস্তানের কয়েক হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
আল-কায়েদার ঘনিষ্ঠ বলে ধারণা করা এই গোষ্ঠী অতীতে পাকিস্তানজুড়ে কয়েকটি ভয়াবহ প্রাণঘাতী হামলার দায় স্বীকার করে। ২০০৯ সালে পাকিস্তানের সেনা সদরদফতরে হামলা, সামরিক ঘাঁটিতে হামলা এবং ২০০৮ সালে ইসলামাবাদের ম্যারিয়ট হোটেলে বোমা হামলার দায় নেয় এই গোষ্ঠী।
২০১৪ সালে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে (এপিএস) হামলা চালায় টিটিপি। এতে ওই স্কুলের ১৩১ শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে দেড়শ জন নিহত হন। টিটিপির এই হামলা সেই সময় দেশ ও বিদেশে ব্যাপক নিন্দার ঝড় তোলে।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট