শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

পেকুয়ায় সংরক্ষিত বনের জায়গায় দেড় শতাধিক পাকা স্থাপনা

পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ::
আপডেট: সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

কক্সবাজারের পেকুয়ার বারবাকিয়া, টইটং ও শিলখালীর পাহাড়ী অঞ্চলের বনবিভাগের সংরক্ষিত জায়গায় গত দুই বছরে গড়ে উঠেছে প্রায় দেড় শতাধিক পাকা স্থাপনা। স্থানীয়দের ভাষ্য প্রতিটি স্থাপনা গড়ে তুলতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক। এতে বনবিভাগের জায়গা বেদখল করে কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের শুরুর দিকে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন হাবিবুল হক। তখন থেকে বর্তমান সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন পেকুয়ার তিন পাহাড়ি অঞ্চলে বনবিভাগের প্রায় ১০০ হেক্টর জায়গার দখল বিক্রি করেছেন এ রেঞ্জ কর্মকর্তা। বেদখল হওয়া এসব জায়গায় গড়ে উঠেছে প্রায় দেড়শোর উপরে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাকা ঘরবাড়ি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বারবাকিয়া ও শিলখালীর পাহাড়ি জায়গায় পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তার পক্ষে আর্থিক লেনদেন করেন পাহাড়িয়াখালী এলাকার বাসিন্দা জালাল আহমদ। তিনি বনবিভাগের হেডম্যান পরিচয় দিয়ে আরও নানাবিধ অপকর্ম করে থাকেন বলে জানা যায়। এছাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তার ডান হাত হিসেবেও বেশ পরিচিত তিনি। অন্যদিকে টইটং এলাকায় রেঞ্জ কর্মকর্তার নির্দেশে টাকা তোলেন হাছানেরজুম এলাকার মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে অলি আহমদ। টইটংয়ে বনবিভাগের জায়গায় পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ, পাহাড়কাটা, অবৈধ বালু উত্তোলনসহ নানা অপকর্ম করার আগে তাঁর সাথে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অলিখিত চুক্তি করতে হয়। সকল অপকর্ম সম্পাদনের জন্য টাকা তুলে তিনি দিয়ে আসেন রেঞ্জ কর্মকর্তার হাতে। স্থানীয়দের দাবী অলি আহমদের কাছে জিম্মি পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষ।

টইটং, শিলখালী ও বারবাকিয়া পাহাড়ি এলাকা ঘুরে জানা যায়, গর্জনিয়া পাড়ায় জামাল হোসেন, জুমপাড়ায় যুবদল নেতা আকতার হোসেন, সোলতান আহমদের ছেলে মৌলভী আলী হোসেন, নুরুল আজিম, ফজুরমুরা এলাকায় মৃত মাহমুদুল হকের ছেলে মো. বাচ্চু, ফজুর মুরা এলাকার ছবির আহমদের ছেলে মো. আলম, কেরনছড়ি এলাকায় মালদ্বীপ প্রবাসী নাসির উদ্দিন, কাতার প্রবাসী আহমদ শফি, চেপ্টামোরা এলাকায় লাইলা বেগম, আবদুল মাজেদ, মধুখালী এলাকায় ঠান্ডা মিয়ার ছেলে আবদু রহিম, ফুরুক আহমদের ছেলে লেদু মিয়া, চৌকিদার পাড়ায় সৌদি প্রবাসি আবুল কাশেম, মৌলভী পাড়ায় সালাহ উদ্দিন, আহমদ ছফার ছেলে শাকের, দরগাহ মোড়া এলাকায় আবদুল হাকিমের ছেলে শাহনেওয়াজ, আবদুল্লাহ পাড়ার জাফর সওদাগর, হাছানেরজুম এলাকায় আবদুল হাকিম, ছনখোলারজুম ছালাম মার্কেটের পাশে মনোয়ারা বেগম, রমিজ পাড়ায় নুরুল হকের ছেলে আববাস উদ্দিন, নতুন পাড়ায় বাদশা মিয়া, খুইন্যাভিটায় মৌলভী হোসাইনের ছেলে শাহাব উদ্দিন, খলিফা মুরায় নুরুল আবছারের ছেলে শাহাবুদ্দিন, জারুলবনিয়া ঢালার মুখ এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী আবদুল্লাহ, মাঝেরঘোনায় মৌলভী নুরুল কবির, ফরিদুল আলমের ছেলে খোকন মিস্ত্রি, সৌদি প্রবাসী বদিউল আলম, সবুজ পাড়ায় ইদ্রিসের ছেলে গরু ব্যবসায়ী মনু মিয়া, মুহাম্মদ হোসেনের ছেলে রমিজ আহমদ, মৃত রহমত আলীর ছেলে আলমগীর, মৃত নুর আহমদের ছেলে জামাল হোসেন, তারাবনিয়া পাড়ার শাহ আলম, হোসাইনাবাদ এলাকায় সৌদি প্রবাসী আবদুল খালেকের ছেলে শওকত, ফাইন্যারচড়া এলাকায় আকতার হোসেনের ছেলে কফিল উদ্দিন, বারবাকিয়া ভারুয়াখালী এলাকায় আবদুল হাকিমের ছেলে হেলাল উদ্দিন, মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে আবুল কাশেম, ওমান প্রবাসী ফয়জুল করিম, সৌদি প্রবাসী নুরুল ইসলামের ছেলে কায়সার উদ্দিনসহ আরও অনেকে স্থায়ী পাকা ঘরিবাড়ি নির্মাণ করেছেন। এসকল পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক।

এদিকে রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক তিন ইউনিয়নে রাম রাজত্ব কায়েম করলেও বন মামলার ভয়ে কেউ টু শব্দ করার সাহস পায়না। এলাকার সাধারণ মানুষ তার কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। হাবিবুল হক পাহাড়ি জনপদে যেন এক অঘোষিত রাজা এমনটা জানিয়েছেন পাহাড়ে বসবাসরত সাধারন জনগন।

আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে অলি আহমদ জানায়, আমি এসবে জড়িত নই। কারো কাছ থেকে কোন সময় টাকা নেওয়া হয়নি। রেঞ্জ কর্মকর্তা টাকা নেয় কিনা আমার জানা নেই।

হেডম্যান পরিচয়দানকারী জালাল আহমদ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.হাবিবুল হক জানায়, রিজার্ভ জায়গায় যে সমস্ত বাড়িঘর তৈরী করছে আমরা অভিযান চালিয়ে এসব গুড়িয়ে দিয়েছি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি। কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি। এগুলো মিথ্যা কথা, অপপ্রচার।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানায়, যারা বাড়িঘর করেছে তাদের তালিকাটা দিন। বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রমান পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরো খবর: