নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া:
কক্সবাজারের পেকুয়ায় ১ নারী প্রবাসীর স্ত্রীর জামানত রাখা ৭ ভরি গহনা উদ্ধার করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে কোর্টে। তবে খোয়ানো যাওয়া ৭ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করিয়ে দিতে পুলিশ আত্মসাৎকারীদেরকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। এ দিকে ৭ ভরি স্বর্ণের জামানত রাখতে গিয়ে দুর্দান্ত প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আত্মসাৎ চেষ্টাকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে চকরিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা রুজু করা হয়েছে। এর তদন্তের ন্যস্তভার দেওয়া হয়েছে পেকুয়া থানার পুলিশকে। উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের সবজীবনপাড়ায় স্বর্ণ লোপাটের এ ঘটনা ঘটে। প্রাপ্ত সুত্র জানান, ২০২১ সালের মার্চের দিকে পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব গিয়েছিলেন সদর ইউনিয়নের সৌদি প্রবাসী গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী রিনা আক্তার। রিনা আক্তারের স্বামী সৌদি আরবের মদিনা শহরে মুদির দোকান নিয়ে ব্যবসা করেন। স্বস্ত্রীক ওই বছর ওমরাহ পালন করেন ওই ব্যক্তি। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়ার সময় গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী রিনা আক্তার ৭ ভরি স্বর্ণসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাগজপত্রগুলি ওই নারীর পিতা কামাল হোসেনকে দিয়ে গিয়েছিলেন। তবে স্বর্ণ যেহেতু দামী বস্তু সেগুলি জামানত রাখেন বারবাকিয়া ইউনিয়নের সবজীবনপাড়ায় মৃত কবির আহমদের পুত্র আনোয়ারুল ইসলামের বাড়িতে। আনোয়ারুল ইসলামের স্ত্রী ছালেহা বেগম ও রিনা আক্তারের পিতা কামাল হোসেন নিকট আত্মীয়। কামাল হোসেনের ছোট ভাই ফরিদুল আলমের আপন শ্যালিকা ছালেহা বেগম। উনাদের বাড়ি বিল্ডিং। স্বর্ণের নিরাপত্তার স্বার্থে নিকট আত্মীয় এ বাড়িতে স্বর্ণগুলি জামানত রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ৮ মাস আগে রিনা আক্তার ও তার স্বামী গিয়াস উদ্দিন সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেন। এসে স্বর্ণগুলি ফেরত পেতে সবজীবনপাড়ায় আনোয়ারুল ইসলামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তবে ১ম দফায় স্বর্ণগুলি কয়েকদিনের মধ্যে দিবেন এমন আশ্বাস দেওয়া হয়। কয়েকদফা গিয়েও জামানত রাখা ৭ ভরি স্বর্ণ ফেরত দেওয়া হয়নি। বার বার কালক্ষেপনসহ নানান ধরনের তালবাহানা ও প্রতিশ্রুতির ভঙ্গ হয়েছে। এ দিকে ৭ ভরি স্বর্ণ জামানত দেয়া থেকে উদ্ধার পাননি। এ নিয়ে রিনা আক্তার ও তার স্বামী গিয়াস উদ্দিন চরমভাবে ব্যথিত ও হতাশ হয়েছেন। বিচলতি ভাব নিয়ে স্বর্ণগুলি উদ্ধারের জন্য তারা ছুটছিলেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। সর্বশেষ স্বর্ণগুলি উদ্ধারের জন্য তারা চকরিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আশ্রয় নেন। চলতি ২০২২ সালের ৩০ মে আদালতে একটি মামলা রুজু করে। যার নং ৭৪৩। মামলাটির বাদী হয়েছেন রিনা আক্তারের পিতা ফাসিয়াখালীর সবজীবনপাড়ার মৃত আমির হামজার পুত্র কামাল হোসাইন (৭০)। মামলায় মৃত কবির আহমদের পুত্র আনোয়ারুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ছালেহা বেগমকে আসামী করা হয়। আদালত সেটি আমলে নিয়েছেন। দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে পেকুয়া থানার পুলিশকে। এ দিকে প্রবাসীর স্ত্রীর ৭ ভরি স্বর্ণালংকার এখনো উদ্ধার হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ গহনাগুলি উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছেন বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছেন। পেকুয়া থানার এস,আই খায়ের উদ্দিন ভূইয়াসহ সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স কয়েকদফা আসামীদের বাড়িতে গিয়েছেন। স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যানকেও পুলিশ বিষয়টি অবহিত করেছেন। পুলিশ ও চেয়ারম্যানের যৌথ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে স্বর্ণ উদ্ধারের জন্য। এ ব্যাপারে গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী রিনা আক্তার জানান, আমি ওমরাহ করতে সৌদি আরবে গিয়েছিলাম। বাইম্যাখালী রোডে আমার বাড়ি। বাড়িটি নির্জন জায়গায়। স্বর্ণগুলি আমার নিকট আত্মীয়ের কাছে হেফাজত দিয়ে গিয়েছিলাম। আমার বাবার আপন তালতো বোনের বাসায়। তারা স্বর্ণগুলি নিয়ে তালবাহানা ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। এখন আমার সংসার নিয়ে টানাপোড়ন। স্বামী কিছুতেই মানছেন না। এ গুলি ফেরত না দিলে আমার সংসার নষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রিনার স্বামী গিয়াস উদ্দিন জানান, আমি এ রকম আচরণ আশা করেনি। আমার শাশুড় বার বার বেহুশ হচ্ছে। পুলিশের আন্তরিকতায় আশা করছি স্বর্ণগুলি উদ্ধার হবে। রিনা আক্তারের বড় বোনের জামাই মমতাজ উদ্দিন জানান, আমরাও বিষয়টি নিয়ে বড় টেনশনে আছি। আমার শাশুড়ের অবস্থা খুবই কঠিন। তিনি হয়তো স্ট্রোক করতে পারেন। পেকুয়া থানার এস,আই খায়ের উদ্দিন ভূইয়া জানান, আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্বর্ণগুলি উদ্ধারের প্রচেষ্টা চলমান। এদেরকে বলেছি স্বর্ণগুলি ফেরত দিয়ে দিতে। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এখন কাজ হচ্ছে পুলিশ ও চেয়ারম্যান মিলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে একটু সহযোগিতা করা।