নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া (কক্সবাজার) ::
কক্সবাজারের পেকুয়ায় চলছে ফসলির মাটি লুটের মহোৎসব। জমির উর্বর শক্তির এসব মাটি দেদারসে লুট হলেও নেই আইনী প্রয়োগ। দিবারাত্রি চলছে ফসলি জমি থেকে হরদম মাটি লুট। তবে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নতজানু ভাব নিরবতা নিয়ে আছে নানান ধরণের প্রশ্ন। ফসলি জমির মাটি জমির প্রাণ শক্তি। এসব প্রাণশক্তি হ্রাস পেয়ে ফসলি জমি হচ্ছে ফসল উৎপাদনের নিস্তেজ হয়ে পড়লেও দেখার যেন কেউ নেই।
অপরদিকে এসব মাটি লুট হয়ে যাচ্ছে ইট ভাটায়। মাটি ইট উৎপাদনের মুল ও মৌলিক উপদান। মাটি দিয়ে ইট উৎপাদন না করতে সরকার আইন করেছে। বিশেষ করে ফসলি জমির টপসয়েল যাতে করে ইট উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত না হতে পারে এ আইন বলবৎ আছে। তবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই পেকুয়ায়।
চলতি সময়ে গত এক মাস আগে থেকে পেকুয়া উপজেলায় টপসয়েল লুটের মহোৎসব চলমান রয়েছে। বাংলা অগ্রহায়ন মাস থেকে কৃষক জমি থেকে ধান কাটা শুরু করে। কোন কোন ক্ষেত্রে নিন্মাঞ্চলের জমি থেকে ফসল কাটতে কিছুটা বিলম্বিত সময় হয়। বিশেষ করে বাংলা পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় অতিবাহিত হয়। ধান কাটার শেষে জমি থেকে শুরু হয় মাটি কাটা।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখাগেছে, পেকুয়া উপজেলার সব ইউনিয়নে চলছে মাটি কাটা। রাজাখালী, মগনামা ও উজানটিয়াসহ এ তিনটি ইউনিয়নে লবণের মাঠ আছে। তবে ফসলি জমিও আছে। পেকুয়া সদর, বারবাকিয়া, শিলখালী ও টইটং ইউনিয়নে বেড়েছে মাটি লুটের ব্যস্থতা। এ চার ইউনিয়নে এমন কোন বিল নেই মাটি লুট হচ্ছেনা। টইটং ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের ফসলি জমি থেকে সবচেয়ে বেশি মাটি লুট হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখাগেছে, টইটংয়ের পুর্ব সোনাইছড়ি, পশ্চিম সোনাইছড়ি, নাপিতখালী, হাবিব পাড়ায় ফসলি জমি থেকে মাটি লুট হচ্ছে। বারবাকিয়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়া, সবজীবন পাড়া, নয়াকাটা, পাহাড়ীয়াখালীর মগঘোনার বিল থেকে কাটা হচ্ছে মাটি।
শিলখালী ইউনিয়নের সিকদারঘোনা, কাছারীমুরার দক্ষিণ দিকে আলিগ্যাকাটার বিলের মাটিও কেটে নিয়ে যাচ্ছে। সদর ইউনিয়নের সরকারি ঘোনা, পুর্ব গোঁয়াখালী, বলির পাড়া, সাবেকগুলদি, সুতাবেপারী পাড়ায় ফসলি জমির মাটি লুট হচ্ছে। স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। পরিবহনের জন্য আছে সিন্ডিকেটের শতাধিক ডাম্পার গাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্রতি গাড়ি মাটি বোঝাই করে দিতে স্কেবেটর মালিককে দিতে হয় দেড়শো টাকা। প্রতি ডাম্পার মাটি বিক্রি হয় দুরত্ব অনুসারে ১হাজার থেকে বারশো টাকা। লবণাক্ত ইউনিয়নগুলোতেও কিছু কিছু এলাকায় ফসলি জমি আছে। এসব জমি থেকেও মাটি লুট হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন কিছু স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে। মাটি লুটের দায়ে কয়েকজনকে আইনের আওতায় এনেছে। ওই সময় থেকে কিছুটা ভয়ের মধ্যে আছে মাটি লুট সিন্ডিকেট। তবে তারা পাল্টিয়েছে ধরণ। দিনে কিছুটা হ্রাস পেলেও রাতের বেলায় ঠিকই লুট হচ্ছে মাটি।
মগঘোনা বিলের কয়েকজন কৃষক জানান, খুবই মারাত্বক অবস্থা। এভাবে মাটি কেটে ফেললে জমি থেকে ফসল উৎপাদন হবেনা। চারিদিকে মাটি লুট হলেও আইনি কোন ব্যবস্থা নেই। প্রশাসন চাইলে মাটি লুট বন্ধ হবে।
সোনাইছড়ি মাঝের পাড়ার লোকজন জানান, মাটি বোঝাই ডাম্পার, ট্রাক রাস্তা ঘাট নষ্ট করে ফেলছে। ধুলোবালিতে সড়ক দিয়ে হাঁটা চলা যাচ্ছেনা। আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। জমি তো শেষ হয়ে যাচ্ছে সাথে রাস্তাঘাটও ধ্বসে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুর পেয়ারা বেগম জানান, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে মাটি পাচারকারীরা মোকামে মোকামে লোক বসায় রাখে। তারা খুব কৌশলী। যার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। এখন আমরা অভিযানে বের হচ্ছি।
###