নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া (কক্সবাজার):;
কক্সবাজারের পেকুয়ায় এখনো নির্মিত হয়নি টইটং খালে মাটির বাঁধ। এতে করে খালের মিঠা পানির উৎসের ওপর নির্ভরশীল অন্তত আড়াই হাজার একর জমির বোরো চাষ অনিশ্চিত রয়েছে। রাবারড্যাম অংশে কৃত্রিম মাটির বাঁধ তৈরি হচ্ছে বিগত দুবছর ধরে। কারিগরি ত্রুটিতে টইটং খালের ওপর স্থাপিত রাবারড্যাম ফুটো হয়ে গেছে। কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নদীর ওই অংশে দেওয়া হচ্ছে মাটির বাঁধ। তবে কিছু দিনের মধ্যে শুরু হবে চলতি বোরো মৌসুম। এখনো খালের ওপর মাটির বাঁধ নির্মিত হয়নি। সেচ ব্যবস্থাপনায় পেকুয়ায় সরকারের নিবন্ধিত সমিতি রয়েছে। বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নির্মাণ ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ পেতে একমাত্র নিবন্ধিত সংগঠন টইটং সোনাইছড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি. প্রতিষ্ঠানটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পেকুয়ার কর্মরত প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদকে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে ওই আবেদনটি এলজিইডি কক্সবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে পাঠানো হয়েছে ঢাকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিবালয়ে।
সুত্র জানান, টইটং খালের ওপর কৃত্রিম মাটির বাঁধ তৈরি করে পেকুয়ার দুটি ইউনিয়নের বিপুল জমিতে বোরো চাষ করা হয়। ২০০৫ সালে টইটং খালের ওপর স্থাপিত হয় রাবারড্যাম। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি সে সময় প্রবাহমান খালের ওপর রাবারড্যাম নির্মাণ করে। সাগরের লোনা পানি আটকিয়ে মিঠা পানির উৎস তৈরি করতে মুলত এ রাবারড্যাম নির্মিত হয়। পানি ও সেচ ব্যবস্থাপনাসহ রাবারড্যামের তদারকি ও দেখভালো দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় পর্যায়ে। টইটং সোনাইছড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি অতীত সময় থেকে সেচ ব্যবস্থাপনার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করে আসছে। কৃষকদের সমন্বিত উদ্যোগে ওই সংগঠন গঠিত হয়েছে। ২০১১ সালে সরকারি কর্তৃপক্ষ রাবারড্যামের দায়িত্বভার তাদের ওপর ন্যস্ত করে।
জানাগেছে, ২০২২ সালের দিকে রাবারড্যামটি ফুটো হয়ে যায়। কারিগরি বিচ্যুতির কারণে নদীর তলদেশে রাবার ছিদ্র হয়। ফলে দেখা দেয় কৃষি উৎপাদনে মারাত্বক সংকট। কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে ওই বছর থেকে সরকার মাটির বাঁধ তৈরি করছে খালে। ২০২৩ সাল থেকে সরকার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে।
এদিকে চলতি বোরো মৌসুম শুরু হচ্ছে পেকুয়ায়। কৃষক বীজতলা তৈরি করছে। তবে টইটং খালে রাবারড্যাম অংশে এখনো নির্মিত হয়নি মাটির বাঁধ।
স্থানীয় কৃষক ও স্কিম মালিক নুরুল ইসলাম ও আহসান হাবিব বলেন, দ্রুত সময়ে খালে মাটির বাঁধ না দেওয়া হলে টইটংয়ের হিরাবনিয়া, পশ্চিম সোনাইছড়ি, নাপিতখালী, বড় পাড়া, নিত্যান্তঘোনা, শের আলী মাস্টার পাড়া, সোনাইয়াকাটা, পন্ডিত পাড়া, মিয়াজিরঘোনা, ধনিয়াকাটা, ভেলোয়ার পাড়া, বারবাকিয়া ইউনিয়নের নয়াকাটা, নোয়াখালী পাড়া, আন্নর আলী পাড়া, কাদিমাকাটাসহ বিপুল অংশে কৃষি আবাদ অনিশ্চিত থাকবে। প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে বোরো চাষ হবেনা।
এ ব্যাপারে টইটং সোনাইছড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি.এর সভাপতি ডাঃ নুরুল কবির বলেন, আমরা দুঃচিন্তায় আছি। খুব দ্রুত সময়ে খালে মাটির বাঁধ না দেওয়া হলে ৮০ হাজার মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। ব্যাহত হবে আড়াই থেকে তিন হাজার একর জমির কৃষিসহ শীতকালীন শাক সবজির আবাদ। আমরা বরাদ্দের জন্য আবেদন পাঠিয়েছি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর পেকুয়ার প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা বরাদ্দের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাকে একটি লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। এলজিইডিকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ে বাঁধ নির্মিত হবে।
###