সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

তিন প্রতিদ্বন্দ্বী দলের তিন প্রার্থীকে নিয়ে বিএনপি নেতা খায়রুল আলম চৌধুরীর অঘোষিত প্যানেল!

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :
আপডেট: মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনের বাতাস শুরু হওয়ার পর থেকে মাঠ দখলে রেখেছেন আওয়ামী লীগ ঘোষিত দলের একক  উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। তাকে পুরোপুরি সঙ্গ দিচ্ছেন সাবেক এমপি জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ আবদুর রহমান বদির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সাবেক বিএনপি নেতা খায়রুল আলম চৌধুরী।

রমজানে একাধিক ইফতার মাহফিল ও আওয়ামী লীগের দলীয় মিটিংয়ে বিএনপি নেতা খায়রুল আলম চৌধুরীর সরব উপস্থিত লক্ষ্য করা গেছে। যদিও দলীয় এসব প্রোগ্রামে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা সিনিয়র দলের নেতাকর্মীদের  উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে  কানাঘুঁষা ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। 

এদিকে এতোদিন ধরে খায়রুল আলম চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর পক্ষে (উপজেলা চেয়ারম্যান পদে) ভোট চেয়ে পাড়া মহল্লা চষে বেড়ালেও গত ১৪ এপ্রিল হঠাৎ করেই রত্মা পালং  ইউনিয়নের ভালুকিয়ায় জামায়ত ইসলামীর আমীর মাওলানা আবুল ফজলের সমর্থনে অনুষ্ঠিত সভায় উখিয়া উপজেলা জামায়াত ইসলামীর আমীর মৌলানা আবুল ফজলকে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করেন এবং তার জন্য ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।

তিনি এতে বলেন, মৌলভী আবুল ফজল কে প্রার্থী করার বিষয়ে তিনি সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি ও আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর সাথে বৈঠক করেছেন। তারা সম্মতি দিয়েছেন। তবে বিষয়টি আদৌ অবগত কিনা বা সম্মতি দিয়েছেন কিনা, এর সত্যতা কতটুকু সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। 

আবুল ফজল এর মিটিংয়ে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্য খায়রুল আলম চৌধুরী  বলেন, সম্ভাব্য ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উখিয়া  উপজেলা জামায়াত আমীর আবুল ফজলের পাশাপাশি তিনি সম্ভাব্য উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর জন্যও ভোট করবেন। তিনি আরও বলেন, তিনি এলাকার স্বার্থের জন্য সবসময় ক্ষমতারধর ব্যক্তির বা ক্ষমতাসীন দলের সাথে থাকেন। এমপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে সর্ম্পক রাখেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়ে যে দল আগামীতে ক্ষমতায় আসবে তিনি তাদের সাথেও কাজ করবেন এবং সেই দলেই যোগ দেবেন ও তাদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন বলে ঘোষণা দেন।

খায়রুল আলম চৌধুরীর এসব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার সাথে সাথে সর্বত্র মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই নিয়ে সচেতনজনরা  জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও মাওলানা আবুল ফজলের ব্যাপারে চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সাবেক সাধারণ সম্পাদক  নাম প্রকাশ না করার শর্ত বলেন, প্রতিনিয়ত  বেপরোয়া কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন  খায়রুল আলম চৌধুরী। তিনি বিএনপি এজেন্ডা ও তার সাবেক এক রাজনীতির গুরু কৌশল বাস্তবায়ন করতে ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর ক্ষতি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। পাশাপাশি সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদিকে কৌশলে বিতর্কিত করে বিএনপির ঘরনা লোক হিসাবে পরিচিত সম্ভাব্য মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিন আক্তারকে বিজয় করানোর অপচেষ্টা লিপ্ত হয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন।

রত্নাপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক ওয়ার্ড সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খায়রুল আলম চৌধুরী কোন পদপদবী ছাড়া ক্ষমতাহীন একজন মানুষ। তিনি আলোচনায় থাকতে এসব ভ্রান্ত কথাবার্তা বলছেন। আগামীতে তিনি আরও অনেক বেফাঁস কথাবার্তা বলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বারোটা বাজাবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। আওয়ামী লীগের একক মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর সমর্থনে আয়োজিত সভা গুলোতে খায়রুল আলম চৌধুরীর উপস্থিতির কারনে অধিকাংশ  আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন না। যেসব সব নেতা-কর্মীগণ সভা সমাবেশ গুলোতে অনিচ্ছায় শর্তেও উপস্থিত হতে বাধ্য হচ্ছেন  তাদেরও গা-ছাড়া ভাব দেখা যায়।

রাজনৈতিক বিজ্ঞজনদের মতে, খায়রুল আলম চৌধুরী নিজ এলাকায় জনপ্রিয় হলেও, রাজনীতির মাঠে তিনি একজন আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি। আর এই ব্যক্তিটিই উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা জামায়াত আমীরের জন্য একসাথে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট খুঁজছেন, যা দৃষ্টি গোচর ও রহস্য জনক। এটা জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে ভোটের মাঠে ডুবানোর একটি অপকৌশল ও ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে তারা অনেকেই মনে করেন!

তৃণমূল  ও ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই নেতা খায়রুল আলম চৌধুরীর বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করতে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদার প্রতি অনুরোধ জানান।

এ ব্যাপারে মন্তব্য জানার জন্য খাইরুল আলম চৌধুরীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিএনপি নেতার সমর্থন চাওয়ার বিষয়টি লজ্জাকর ও নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সাবেক সভাপতি। আওয়ামী লীগ, জামায়াত ইসলামী ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর জন্য  একজন ব্যক্তি  প্রকাশ্যে এক মন্ঞে ভোট চাইবেন অথবা বক্তব্য রাখবেন সেটা আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা কর্মীরা কোনভাবেই  মেনে নিতে পারতেছে না।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে  দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে সারা দেশে আওয়ামী লীগের বিশাল ভোট ব্যাংক তৈরি হয়েছে। তাছাড়া জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীও বিশাল ভোট ব্যাংক ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছেন উখিয়া উপজেলায়। পাশাপাশি তিনি টানা ৩ বার সরাসরি ভোটে নির্বাচিত রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তাছাড়াও তিনি উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি। হেভিওয়েট একজন  আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে ভোটের জন্য বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতার কাছে ভোটের জন্য যাওয়ার ও ভোটের জন্য ধর্ণা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, সাধারণ মানুষের ভোটে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীরা এমনিতেই বিপুল ভোটে  জিতবে।

উল্লেখ্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের সম্ভাব্য প্রার্থী  জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী এক যুগেরও বেশি সময় ধরে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি। দলের মনোনীত প্রার্থী হয়ে ও নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি টানা ৩ বার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। পক্ষান্তরে সম্ভাব্য  ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা আবুল ফজল উখিয়া উপজেলা জামায়াত ইসলামী একজন বর্তমান আমীর ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিন আক্তার বিএনপি’র  সমর্থন নিয়ে ইতিপূর্বে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন ( তৎকালীন সময়ে শাহিন আক্তারের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী খোরশেদা করিম)।

তিন  প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সমর্থিত তিন প্রার্থীকে  নিয়ে নিজস্ব অঘোষিত প্যানেল সৃষ্টির মাধ্যমে  ভোটের মাঠে কাজ  করছেন রত্না পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আলোচিত-সমালোচিত খায়রুল আলম চৌধুরী। এতে বেকায়দায় পড়ে গেছেন আওয়ামী লীগ, জামায়াত ইসলামী ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ও তাদের স্ব স্ব দলের সিনিয়র জুনিয়র নেতা-কর্মীরা এবং সমর্থকরা।

এই ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা জানান, খায়রুল আলম চৌধুরী আওয়ামী লীগের কোন পদে নেই। তাই তিনি কোথায় কি বক্তব্য রাখলেন বা কোন প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন সেটা তার একান্তই বিষয়। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা আবুল ফজল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিন আক্তার আমাদের দলের মনোনীত বা সমর্থিত কেউ নয়। তাদের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কোন সৈনিক বা নেতা-কর্মী ভোট চাইতে পারেন না।

এদিকে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী পৃথক এক বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে রাজনৈতিক আমেজে এটাই স্বাভাবিক, তবে সেটি যেনো শিষ্টাচার বহির্ভূত না হয় এমনটাই কাম্য।

জনপ্রিয়তা ঈর্ষার সৃষ্টি করে, ঈর্ষা থেকে ছড়ায় অবান্তর প্রলাপ। প্রত্যাশা, এসব প্রলাপ কিংবা অপ্রাসঙ্গিক আলোচনায় আমাকে ভালোবাসা দেওয়া উখিয়ার লাখো মানুষ কখনো বিভ্রান্ত হবে না।

আমি সবসময় গণমাধ্যমে কর্মরতদের সম্মান এবং মর্যাদায় বিশ্বাসী। আমার মন্তব্য ব্যতিত একটি সংবাদ দৃষ্টিগোচর হয়েছে, যেটির প্রেক্ষাপটে আমাকে রাখা হয়েছে যা আসলে অপ্রত্যাশিত।

সংবাদ পরিবেশনে আলোচ্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য নেওয়া সাংবাদিকতার নীতি অনুযায়ী বাঞ্চনীয়, আশা করছি এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ভবিষ্যতে সতর্কতা এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবে।


আরো খবর: