ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর – আপত্তিকর ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় যশোরের চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পায়েল হোসেনকে ক্লোজড করা হয়েছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) তাকে যশোর পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাত্র দেড় মাস আগে চৌগাছা থানায় যোগদান করা এ ওসির বিরুদ্ধে টর্চার সেল পরিচালনা, ঘুষ ও রিমান্ড বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নিরীহ মানুষকে হয়রানি এবং নারী কেলেঙ্কারির মতো বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে তাকে এক নারীর সঙ্গে অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করতে দেখা যায়। যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ওসি পায়েল হোসেন গত ১৭ নভেম্বর ঢাকার রমনা থানা থেকে বদলি হয়ে চৌগাছা থানায় যোগদান করেন। একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে তিনি সীমান্তবর্তী উপজেলা যশোরের চৌগাছা থানার ওসির পদে আসীন হন। এ টাকা তুলতে তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে। প্রথম অভিযানে চৌগাছা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিনের বাড়ি সারা রাত অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় জসিম উদ্দিনকে একাধিক মামলায় আসামি করা হয়।
এছাড়া উপজেলার ভাদড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মানিক হোসেনকে আটক করে থানায় আনার পর হাজতে না রেখে নিজের বাংলোতে আটকে শারীরিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় মানিকের স্ত্রীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করে তা আদায় করেন। পরে অস্ত্র মামলায় তাকে রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করেন।
এছাড়া মাসিলা গ্রামের পারভেজ আহমেদ সোহাগ নামের এক যুবককে তুলে এনে ৩২ ঘণ্টা আটকে রেখে ইলেকট্রিক শক ও নির্যাতনের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠে। এরপরও তাকে ডাকাতি ও মাদক মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন। ২৩ নভেম্বর উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদ মল্লিককে গ্রেফতার করে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন ওসি পায়েল। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, তিনি তালাকপ্রাপ্ত, এই সুযোগে ওসি তাকে বিভিন্ন সময়ে ফোন কল করে থানায় ডাকতো। বিভিন্নভাবে তার লালসা চরিতার্থ করতে জোরজবরদস্তি করতো।
ভাইরাল হওয়া অডিও-ভিডিও প্রসঙ্গে ওসি পায়েল হোসেন দাবি করেন, তাকে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
এসব ব্যাপারে যশোর পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘ওসি পায়েলের কর্মকাণ্ডে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) রুহুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সূত্র : সময় নিউজ