ঢাকা, ০৮ ফেব্রুয়ারি – শেখ হাসিনা ছাত্র সমাজের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবনে সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও ভাঙচুর ছড়িয়ে পড়ে। দুই দিন ধরে চলমান এই পরিস্থিতিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নৈরাজ্যের জন্য দায়ী কে?
কিছু বিশ্লেষকের মতে, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বার্তা পাঠানোর জন্য এটি একটি পরিকল্পিত উদ্যোগ হতে পারে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করে এই বিশৃঙ্খলাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশিষ্টজনরা সতর্ক করে বলেছেন, এই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সুযোগ নেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।
জনরোষের পেছনে কারণ কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা মনে করেন, এই ক্ষোভের পেছনে দীর্ঘদিনের বঞ্চনার ইতিহাস রয়েছে। তিনি বলেন, “তরুণ সমাজ বারবার প্রতারিত হয়েছে এবং ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত আশঙ্কাই এই ক্ষোভের মূল কারণ।”
মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, “গণহত্যা ও সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের বিলম্ব, আহত ও নিহতদের পরিবারের সংগ্রাম—সব মিলিয়ে এই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।”
৩২ নম্বরের বাসভবনের আক্রমণ: প্রতীকী প্রতিবাদ নাকি পরিকল্পিত হামলা?
বিভিন্ন মহলের মতে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে হামলা কেবল একটি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত লেখক ফাহাম আবদুস সালাম মনে করেন, “শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দিতেই তার ভাষণকে কেন্দ্র করে এই প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।”
লেখক ফাহাম আবদুস সালাম বলেন, “শেখ হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, যাতে ভারত ও আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝানো যায় যে, তার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ বিপর্যস্ত।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও শিথিলতা
নানান বিশ্লেষক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “সরকার এ ধরনের নৈরাজ্যকে সহনশীলতা দেখাচ্ছে, যা আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।”
অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, “সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর শিথিল অবস্থান প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করছে।”
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা আরও অরাজকতার জন্ম দিতে পারে। যদি যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
সূত্র : বিবিসি বাংলা