শিরোনাম ::
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

ট্যাংক ছেড়ে ট্রাক্টর নিয়ে চাষাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনী

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
ট্যাংক ছেড়ে ট্রাক্টর নিয়ে চাষাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনী


ইসলামাবাদ, ২৭ সেপ্টেম্বর – পাকিস্তানে সেনাবাহিনীই সব। জন্মের পর থেকে গত সাত দশকের বেশিরভাগ সময় দেশ শাসন করেছে। একদিকে জাতির রক্ষকের দায়িত্ব, আরেকদিকে প্রশাসন সামলানো, উভয় ভূমিকাই পালন করতে অভ্যস্ত দেশটির সশস্ত্র বাহিনী।

এবার একেবারেই নতুন এক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে পাক সামরিক বাহিনী। সেটা আর কিছুই নয়, ট্যাঙ্ক ছেড়ে এবার ট্রাক্টর ধরছে সেনারা। এককথায় কৃষিকাজে নামছে সেনাবাহিনী। শিগগিরই তাদের ট্রাক্টর নিয়ে জমি চাষ করতে দেখা যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান যে অর্থনৈতিক দুর্দশা ও খাদ্য সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে তা মোকাবিলা করতেই চাষাবাদের পরিকল্পনা করছে পাক সেনা। কয়েক বছর ধরেই বেহাল পাকিস্তানের অর্থনীতি। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটও। খাবার নেই গরিবের ঘরে। কিছুদিন পরপরই ধরনা দিচ্ছে ধনি দেশ ও ঋণদাতা সংস্থাগুলোর দুয়ারে। যার কিছুটা প্রভাব পড়েছে সেনাবাহিনীতেও। আর তাই খাদ্য উৎপাদন বাড়াতেই মাঠে নামছে সেনাবাহিনী।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেনাবাহিনী পাক অধিকৃত পাঞ্জাবের ১০ লাখ একর বা ৪ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। জমির এই পরিমাণ আকারে ভারতের রাজধানী দিল্লি শহরের তিন গুণেরও বেশি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ১ লাখ ১০ হেক্টর সরকারি জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, পাঞ্জাব প্রদেশে যে সরকারি জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেটা মূলত চোলিস্তান মরুভূমির পার্শ্ববর্তী এলাকা। এই অঞ্চলটি বেশ শুষ্ক। শুধু শুষ্কই নয়, রয়েছে পানির ঘাটতিও। যারা এই পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছেন তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই অঞ্চলেই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু ভালো ফসল উৎপাদনই নয়, পানিও সাশ্রয় করবেন তারা।

পাঞ্জাবের জমি সেনাবাহিনীকে ৩০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হবে। এই সময়ে তারা গম, তুলা ও আখের পাশাপাশি শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদন করবে। উৎপাদিত ফসল সেনা ও সরকারের মধ্যে ভাগ করা হবে সমানভাবে। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে যে মুনাফা হবে তার ২০ শতাংশই আবারও কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে বলেও জানা গেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সরকারি জমি অধিগ্রহণ করছে সেনাবাহিনী। তবে অর্থনৈতিক ধসের মুখে থাকা সেনাবাহিনীর নতুন এ তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগও দেখা দিয়েছে দেশটির একাংশে। এতদিন রাজনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রনীতি সবকিছুই চলেছে ক্যান্টনমেন্টর ইশারায়। এবার প্রভাব বাড়াচ্ছে কৃষিক্ষেত্রেও। সেজন্যই তারা সরকারি কৃষিজমি অধিগ্রহণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন বলা হয়েছে, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ শুরু হয় চলতি বছরের শুরুর দিকেই। এতে সামরিক ও বেসামরিক যৌথ বিনিয়োগে ইজারা নেওয়া সরকারি জমিতে সেনাবাহিনী পরিচালিত খামারে শস্য উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে এই মুহূর্তে ৫ লাখ ৬০ হাজার জওয়ান কর্মরত আছেন। এছাড়া দুই হাজার ট্যাঙ্ক, চার হাজারের বেশি অত্যাধুনিক কামান, ৪২৫টি যুদ্ধবিমান ও সাবমেরিন রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও দেশটির পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ হয়নি। পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যায় ভারতের চেয়েও এগিয়ে পাকিস্তান। সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, পাক সেনাবাহিনীর কাছে ১৭০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে।
বাজেটে সামরিক বরাদ্দ হিসাবে প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে একটা বড় অঙ্কের অর্থ পায় পাক সেনাবাহিনী। চলতি বছর (২০২৩-২৪) অঙ্কটির পরিমাণ ৬২৭ কোটি ডলার। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।

এছাড়া স্বতন্ত্রভাবে সেনাবাহিনীর নিজস্ব আয়ও কম নয়। ৫০টিরও বেশি পৃথক পৃথক সংস্থার মালিক। যেখান থেকে সারা বছরে ২ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার আয় হয়। এই পরিসংখ্যান ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি কিংবা মুকেশ আম্বানিদের আয়ের চেয়েও বেশি। তাদের অধীনে স্কুল-কলেজ ও ব্যাংকের মালিকানা থেকে শুরু করে চাষযোগ্য বিপুল জমিও রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অধীনে রয়েছে সে দেশের মোট ভূখণ্ডের ১২ শতাংশ জমি।

‘ফৌজি ফাউন্ডেশন’ নামে পাক সেনাবাহিনীর একটি সংস্থা রয়েছে। কয়েক বছর আগে পাকিস্তান সেনার ওপর প্রকাশিত হয় গবেষক আয়শা সিদ্দিকির লেখা বই ‘মিলিটারি ইঙ্ক’। তাতে বলা হয়, পাকিস্তানের রিয়েল এস্টেট, সার, সিমেন্ট থেকে শুরু করে ব্যাংক এমনকি বহু স্কুলেরও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ফৌজি ফাউন্ডেশনের হাতে। শুধু তাই নয়, দেশের জমির একটা অংশই দখল করে রেখেছে পাক সেনা। ওই বইতে আরও বলা হয়, একজন মেজর জেনারেল অবসর নিলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে প্রায় ২০০ একর জমি দেওয়া হয়। এই জমি চড়া দামে ইচ্ছে মতো বিক্রি করতে পারেন তিনি। বিমা করে ওই জমিতে শুরু করা যায় রিয়েল এস্টেট প্রকল্পও। লভ্যাংশের একটা অংশ অবশ্য যায় ফৌজি ফাইন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে।

সূত্র: যুগান্তর
এম ইউ/২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩





আরো খবর: