সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতরা যেসব সুবিধা পাবেন

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


ঢাকা, ০২ ফেব্রুয়ারি – ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, শহীদ পরিবার এককালীন বা মাসে মাসে অর্থ পাবেন। সন্তানরা পাবেন বিনামূল্যে শিক্ষা সহায়তা। আহতদের জন্যও থাকছে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধা।

আহতদের চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সহায়তা দেওয়া হবে। তারা আজীবন চিকিৎসা সহায়তা পাবেন। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে, দেওয়া হবে উচ্চশিক্ষার সুযোগ।

একই সঙ্গে কেউ সহায়তা পেতে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে আহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। গুনতে হবে নেওয়া অর্থের দ্বিগুণ জরিমানা।

এজন্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ এ শহীদ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নীতিমালা, ২০২৫’ এর খসড়া করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেল।

শিগগির নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতের পরিবার ও আহতদের সহায়তা এবং পুনর্বাসনের জন্য আমরা একটা নীতিমালা করছি। একটি খসড়া করা হয়েছে। আগামী দু-তিনদিন পর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আছে। সেখানে খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত করবো।’

কবে নাগাদ সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আহতদের বিষয়ে সারাদেশের তথ্য আমরা এখনো পাইনি। এখন পর্যন্ত ৩৩টি জেলা থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আমরা শুরু করার জন্য প্রস্তুত আছি। শহীদদের একটা তালিকা তো হয়ে আছে। আমরা শহীদ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম যে কোনো সময় শুরু করবো। প্রধান উপদেষ্টা এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।’

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও শহীদ পরিবারকে সহায়তা দিতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন এবং শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিচিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে গত ১৫ আগস্ট একটি কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। ১৩ সদস্যের ওই কমিটির আহ্বায়ক হন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির।

শহীদ পরিবার যে সুবিধা পাবে
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার সরকার নির্ধারিত এককালীন অনুদান পাবে। শহীদের সন্তানরা বিনামূল্যে পাবেন শিক্ষা সহায়তা। এককালীন সরকারি অনুদান বণ্টনের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার আইন প্রযোজ্য হবে।

‘ক্যাটাগরি-বিতে থাকবেন গুরুতর আহতরা। এক হাত বা পাবিহীন, আংশিক দৃষ্টিহীন, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বা এমন আহত ব্যক্তি ক্যাটাগরি-বিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

যারা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, কিন্তু সুস্থ হতে আরও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম হবে (শ্রবণশক্তি বা দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত, গুলিতে আহত বা এমন আহত ব্যক্তি) ক্যাটাগরি-সির মধ্যে পড়বেন।
সাধারণ আহতরা থাকবেন ক্যাটাগরি-ডিতে। যারা আহত হওয়া সত্ত্বেও ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম তারা ক্যাটাগরি-ডির অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আহতদের কোন ক্যাটাগরিতে কী সুবিধা
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী ‘ক্যাটাগরি-এ’র অন্তর্ভুক্ত আহত ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত হারে এককালীন বা মাসিক অনুদান এবং আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।

ক্যাটাগরি-বিতে আহত ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত এককালীন অনুদান, আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা ও বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে উপযুক্ত কর্মসংস্থান বা পুনর্বাসন করা হবে।

ক্যাটাগরি-সির আহত ব্যক্তি আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে উপযুক্ত কর্মসংস্থান বা পুনর্বাসন করা হবে।
ক্যাটাগরি-ডির আহত ব্যক্তি আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন বলে খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

সুবিধা দিতে চার কমিটি
নীতিমালায় বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার বা আহত হয়েছেন এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান, আর্থিক অনুদান, পুনর্বাসনের জন্য উপজেলা, জেলা বা সিটি করপোরেশন, বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় কমিটি থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে থাকবে ১৯ সদস্যের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত উপজেলা কমিটি।

জেলা বা সিটি করপোরেশন কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন জেলা প্রশাসক। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ২০ জন। অন্যদিকে বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি হবে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে। এ কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৫ জন।

শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের পুনর্বাসনে কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী/উপদেষ্টা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী/উপদেষ্টা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী/উপদেষ্টা। ২৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব।

সুবিধা পাওয়ার শর্ত
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, আহতদের ক্ষেত্রে যারা স্থায়ীভাবে যে কোনো ধরনের পঙ্গুত্ববরণ করেছেন তাদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। তাদের মাসিক অনুদান উপজেলা বা জেলা প্রশাসন এবং চিকিৎসা সহায়তা সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে দেওয়া হবে। আঘাতপ্রাপ্ত আহত ব্যক্তি দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারলে তালিকাভুক্ত ব্যক্তির চিকিৎসা বাবদ ব্যয়ের সম্পূর্ণ বা আংশিক সরকারিভাবে পরিশোধের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।

যে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা লাভকারীর ব্যাংক হিসাবে বিইএফটিএন (বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড স্ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক) বা এমএফএস (মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, যেমন- বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি) মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে সরাসরি দেওয়া হবে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সরকার নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেবে।

আহত ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন। সরকারি ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার জন্য কোনো আবেদন করার প্রয়োজন হবে না। তবে এ সুবিধা পাওয়ার জন্য আহতদের পক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণক বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবা দেওয়ার সময় আহতদের পরিচিতিমূলক দলিলপত্র বা প্রমাণক যাচাই করতে পারবেন। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসা দিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সংক্রান্ত ব্যয় সরকার বহন করবে। এই নীতিমালার অধীন জারি করা আদেশ বা পরিপত্রের নির্দেশনার আলোকে আহতদের চিকিৎসা সুবিধা দিতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

কর্মসংস্থান
নীতিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা তাদের রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনের সদস্যদের আক্রমণে আহত হয়ে ক্যাটাগরি-বি ও সি হিসেবে যারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে।

এক্ষেত্রে আহত ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় উপযুক্ত বিষয়ে (কম্পিউটার ট্রেড, ফ্রিল্যান্সিং, গবাদি পশুপালন, মৎস্য খামার, পোল্ট্রি ফার্মিং, মোবাইল সার্ভিসিং, ড্রাইভিং ইত্যাদি) প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এক্ষেত্রে অর্থায়নে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান নেওয়া হবে।

মিথ্যা-ভুল তথ্য দিলে পেতে হবে শাস্তি
অসৎ উদ্দেশ্যে তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য কোনো ব্যক্তি ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে অনুদান নিলে নেওয়া অর্থের দ্বিগুণ জরিমানাসহ পুরো অর্থ সরকারকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে এবং সরকার প্রচলিত আইনে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ অর্থ আদায়ে ‘সরকারি পাওনা আদায় আইন, ১৯১৩’ অনুসরণ করা হবে। উপজেলা কমিটির সদস্য-সচিব অর্থ আদায়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ ও প্রতিকার
খসড়া নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, অনুদান/পুনর্বাসন/কর্মসংস্থান সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ উপজেলা কমিটির কাছে উত্থাপিত হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কমিটি তা নিষ্পত্তি করবে। উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জেলা কমিটির কাছে আপিল করা যাবে এবং জেলা কমিটি এ ধরনের আপিল দ্রুত নিষ্পত্তি করবে। জেলা কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিটি বরাবর পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করা যাবে এবং বিভাগীয় কমিটি এ ধরনের আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি করবে। তবে বিভাগীয় কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

সহায়তা দিতে ২৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারকে সহায়তা ও আহতদের চিকিৎসা বাবদ সহায়তায় চলতি অর্থবছর ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ৮২৬ জন শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র কিনে দিতে ৮২ কোটি ৬০ লাখ এবং ১৫ হাজার আহতের চিকিৎসায় অনুদান হিসেবে ১৫০ কোটি টাকা ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

চলতি অর্থবছরে আহতদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ক্যাটাগরি-এ’তে এক হাজার ব্যক্তি প্রতিজন দুই লাখ টাকা, ক্যাটাগরি-বিতে প্রতিজন এক লাখ টাকা, ক্যাটাগরি-সিতে প্রতিজন এক লাখ টাকা, ক্যাটাগরি-ডিতে প্রত্যেকে পাবেন ৫০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা সহায়তা। এছাড়া আহতদের দেশে-বিদেশে পরামর্শ সেবার জন্য ২৫ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হবে বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

সূত্র: জাগো নিউজ
এনএন/ ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫



আরো খবর: