ঢাকা, ২৬ মার্চ – মালয়েশিয়া ও ফিনল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজনের পরিধি, কাঠামো, পদ্ধতি ও আয়োজন সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে।
ভোটাভুটির মাধ্যমে মঙ্গলবার ওই প্রস্তাব গৃহীত হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই প্রস্তাবের ওপর উন্মুক্ত বিতর্ক চলার সময় রাশিয়া বেশ কিছু সংশোধনের প্রস্তাব করে, তবে বাংলাদেশ তা গ্রহণ করেনি। এক পর্যায়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী ওই প্রস্তাবের ওপর ভোটের প্রস্তাব করলে সেটি ১৪১ ভোটে গৃহীত হয়। প্রস্তাবের বিপক্ষে কোনো ভোট পড়েনি, তবে ১০টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।
সাধারণ পরিষদে এমন এক সময়ে এই প্রস্তাব গৃহীত হল, যখন ঢাকা আগামী সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশেষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। ফলে এটি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর মনে করছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্টের পর রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে স্রোতের মত ঢুকতে শুরু করে রোহিঙ্গারা।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার একপর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি রোহিঙ্গারা, ফলে ভেস্তে যায় আলোচনা।
এরপর আসে কোভিড মহামারী; রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। তাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন ধাক্কা।
এর মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের যুদ্ধের তীব্রতার মধ্যে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আলোচনাতেই কম আসছে।
প্রত্যাবাসনের আলোচনা আপাতত বন্ধ; উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। এর মধ্যে সম্প্রতি আরও ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের তথ্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
এর অংশ হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে ‘সব অংশীজনের সম্মেলন’ আয়োজনের প্রস্তাব দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিজে চোখে দেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে এক ইফতার আয়োজনে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “শেষমেষ মিয়ানমারেই সমাধান পেতে হবে আমাদের। এখানে থাকা সব শরণার্থীর স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না।”
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এনএন/ ২৬ মার্চ ২০২৫