কক্সবাজারের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় পিকআপ চাপায় পাঁচ ভাই নিহতের পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত নিহতদের ভাই রক্তিম শীলও অবশেষে মারা গেছেন। দুর্ঘটনার পরে টানা ১৪দিন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে তিনিও পরপারে চলে গেলেন।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন গুরুতর আহত রক্তিম। তার বৃদ্ধ মা মনু রানী শীল ও স্থানীয় ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান রক্তিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুরেশ চন্দ্র শীলের সন্তানেরা তাদের বাবা’র শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জন্য সনাতন ধর্মমতে সাত ছেলে ও এক মেয়ে ভোরবেলা শ্রাদ্ধ কর্ম সম্পন্ন করতে হাসিনাপাড়া থেকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে শশ্মানে যান। শশ্মান থেকে শ্রাদ্ধকর্ম শেষে বাড়ি ফেরার পথে ওইদিন ভোর ৫টার দিকে মহাসড়কের চকরিয়ার মালুমঘাট বাজার সংলগ্ন নার্সারি এলাকায় দ্রুতগামী একটি পিকআপ গাড়ির চাপায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে একই পরিবারের ৫ সহোদর নিহত হন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডস্থ হাসিনা পাড়া এলাকার মৃত সুরেশ চন্দ্র শীলের ছেলে অনুপম শীল (৪৬), তার ভাই নিরুপম শীল (৪০), দীপক শীল (৩৫), চম্পক শীল (৩০)। ওই ঘটনায় আহত তাদের অপর ভাই স্মরণ শীল (৩৬) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। এসময় আহত হন সুরেশ চন্দ্রের আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের বাবা সুরেশের মৃত্য হয় পাঁচ ছেলের মৃত্যুর ১০ দিন আগে।
সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রক্তিম ও প্লাবন দুইভাই এবং তাদের বোন হীরা আহত হন। এরমধ্যে রক্তিমের অবস্থা ছিল খুবই আশঙ্কাজনক।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেছিলেন, মেডিসিন, নিউরোসার্জারি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, অর্থোপেডিকস ও আইসিইউর পরামর্শকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে রক্তিমের চিকিৎসা পরিচালনা হচ্ছে। তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং তিনি অজ্ঞান ছিল। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গুরুতর আহত রক্তিমকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। ওখান থেকে মেডিকেলের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনায় পিকআপ চাপায় ৫ ভাই নিহতের পরিবারটি সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেছে। একসঙ্গে নিহত পাঁচভাইয়ের স্মরণে গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তাদের শ্রাদ্ধ সম্পন্ন হয়। এ হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে সেদিন প্রতিবেশীরাও চোখের জল ফেলে। কক্সবাজার মহাসড়কে পিকআপ চাপায় দুর্ঘটনার পরে টানা ১৪দিন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে চলে যান রক্তিম। নিহত রক্তিমেরা ছিলেন আট ভাই। মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় রক্তিমসহ চলে গেলেন ছয় ভাই। এরই বছর দুয়েক আগেও অসুস্থ হয়ে মারা যান তাদের আরেক ভাই। পরিবারের সবার ছোট প্লাবন। তিনি চলতি বছর এইচএসসি পাস করেছেন। তার অপর ৫ ভাই রক্তিমসহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ঘটনার দিন তিনি দুর্ঘটনায় সামান্য আহত হয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। ইতোমধ্যে হাসপাতাল থেকে রক্তিমের মরদেহ নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় পিকআপ চাপায় পাঁচ ভাই নিহতের পরে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত নিহতদের ভাই রক্তিম শীলও সকালের দিকে মারা গেছে। টানা দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে পরপারে চলে গেলেন রক্তিমও। এ পরিবারে তাদের কর্মক্ষম ব্যক্তি হিসেবে আর কেউ রইলো না।