বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

চকরিয়ায় ১৪৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু কর্ণারে জাতির পিতাকে দেখবেন শিক্ষার্থীরা

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া::

একটি বিদ্যালয় একটি স্বপ্নের বাতিঘর শিরোনামে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় অবস্থিত ১৪৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার’ নামের বাঙালি জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির স্মৃতিকাগার। জীবনের প্রথম পাঠশালায় স্থাপিত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারের বদৌলতে নতুন প্রজন্মের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানবেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস।
মুলত সরকারি নির্দেশনার আলোকে নতুন প্রজন্মের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা অর্জনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বার্তা তুলে ধরতে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এই উদোগ হাতে নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে ২০২০-২০৩১ ও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরকার প্রদত্ত স্লিপ ফান্ডের টাকায় ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলার ১৪৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার। যেখানে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৬০ টি দুর্লভ ছবি। যা ১৯২০ থেকে১৯৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম ইতিহাস সম্বলিত পিভিসি লেমিনেটেড বোর্ডে তুলে ধরা হয়েছে। এসব দুর্লভ ছবি প্রতিটি বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারে সুচারু ভাবে বসানো হয়েছে ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং করে স্থাপন করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার।চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষা বিভাগের নিবিড় তদারকির কল্যাণে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপিত হবার মধ্যদিয়ে অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছে চকরিয়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অঙ্গন। এতে করে বিদ্যলয় গুলো হয়ে উঠছে কোমলমতি শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক, চিত্তাকর্ষক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি দেশপ্রেমিক পাঠশালা হিসেবে।
চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো.আবু জাফর বলেন, দুই অর্থবছরে স্লিপ ফান্ডের টাকায় ইতোমধ্যে শতাধিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে নির্মিত হয়েছে শেখ রাসেল কর্ণারও। তিনি বলেন, অবশিষ্ট বিদ্যালয়গুলোতে চলতি আগস্টের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপন কাজ সমাপ্ত হবে। সেই লক্ষ্যে সবাইকে কাজ এগিয়ে নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার নির্দেশনা দিয়েছেন।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, সরকারি নির্দেশনার আলোকে সাবেক ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ মহাদয় একটি বিদ্যালয় একটি স্বপ্নের বাতিঘর শিরোনামে গতবছর থেকে চকরিয়া উপজেলার ১৪৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপন করা শুরু করেছিলেন। সেই থেকে আমরাও প্রতিটি বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছ। ইতোমধ্যে ১৪৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মাণকাজ সমাপ্তির পথে
তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন।
মুলত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কক্সবাজার জেলাধীন চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন চকরিয়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার কে সাথে নিয়ে হাতে নিয়েছেন এক অনন্য কার্যক্রম “একটি বিদ্যালয়, একটি স্বপ্নের বাতিঘর “। তিনি আশা প্রকাশ করেন ১৫ আগস্ট প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দখবেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা

ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবন আদর্শ ও দেশপ্রেম, মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও চেতনা, স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সকল স্তর, ভাষা আন্দোলনের ত্যাগ ও তাৎপর্য সহ দেশ-বিদেশ তথা সারা বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান, জানা-অজানা সবকিছু প্রাথমিক এর এই শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে গতানুগতিক ধারার শিক্ষা থেকে বের হয়ে জ্ঞানী এক প্রজন্ম গড়ে তোলাই আমাদের এই কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের জন্য চমৎকার পরিবেশ, আধুনিক ও আনন্দঘন পাঠদান পদ্ধতি নিশ্চিত করতেই আমাদের এই উদোগ।

চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার অঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ইতোপুর্বে চকরিয়া উপজেলার ১৪৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবকটিতে ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।
এবছর প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার। প্রতিটিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ কিছু ছবি ও ইতিহাস নিয়ে ফটো গ্যালারী ও বইয়ের সমাহার। বিদ্যালয়ের একটি সুসজ্জিত কক্ষে আলোকোজ্জ্বল ও আধুনিকমানের ফ্লোর টাইলস করণ করা হয়েছে প্রতিটি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা নতুন প্রজন্মের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যালয়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারের বদৌলতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাবে।
চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, একটি বিদ্যালয় একটি স্বপ্নের বাতিঘর কর্মসুচিতে আমাদের অনেকগুলো প্রস্তাবনা রয়েছে। তদমধ্যে আছে উপজেলার প্রত্যেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাগার স্থাপন করা। প্রত্যেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবেশ বান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন বাগান তৈরি করা। প্রত্যেকটি সরকারি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ গুলোকে পর্যায়ক্রমে আলোকোজ্জ্বল, ফ্লোর টাইলস করন, বিদ্যালয় প্রবেশপথের অ্যাপ্রোচ রোড গুলোতে পার্কিং টাইলসকরণ।

প্রত্যেক সপ্তাহে প্রত্যেক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রমের বাহিরে জ্ঞান প্রসারিত করার জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাস এর মাধ্যমে আনন্দঘন পরিবেশে ক্লাস করানো। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা। শিক্ষার্থীদের নিয়ে নৈতিকতা ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, হেলথ ক্লাব ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম গ্রহণ করা।

এছাড়াও পরিকল্পনা আছে, প্রত্যেক বিদ্যালয়ে সমস্যা পর্যালোচনা করে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার ক্রমশ কমানো এবং শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় হতে ঝরে পড়া বন্ধ করা।
প্রতিটি বিদ্যালয়ে সুসজ্জিত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণী স্থাপন করা, যাতে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে ক্রীড়া সামগ্রী। শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য থাকছে ক্রীড়া সামগ্রী। ও বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও দৃশ্যমান স্থানগুলোতে শিক্ষার্থীদের নৈতিক চরিত্র গঠনের জন্য সহায়ক হিসেবে থাকবে নৈতিকতা শিক্ষার বাণী। মনিষীদের প্রতিচ্ছবি।


আরো খবর: