শিরোনাম ::
ভয়ঙ্কর অবস্থায় রাজধানীর বায়ুদূষণ | SUN NEWS BANGLADESH নূরুল হক এডুকেশন ট্রাস্ট ফেঞ্চুগঞ্জ-ইউকে-র আব্দুর রশিদ ভূঁইয়া স্মৃতি বৃত্তি-২০২৪ অনুষ্ঠান তিন ঘণ্টার চেষ্টায় চট্টগ্রামে পোশাক কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে একটি গোষ্ঠী আন্দোলনকে ‘হাইজ্যাক’ করে ক্ষমতায় বসেছে মঙ্গলবার গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা | SUN NEWS BANGLADESH ডেস্কের কাছে নাক খুঁটেছে মাস্কের ছেলে, শতাধিক বছরের পুরনো ডেস্কই সরিয়ে দিলেন ট্রাম্প! ঝিনাইদহে ৩ জনকে হত্যার দায় স্বীকার করে খুদে বার্তা পেকুয়ায় চাঁদা না দেওয়ায় লবণমাঠের পলিথিন কেটে দিল দূর্বৃত্তরা পিকআপের ধাক্কায় পেকুয়ার দুই ডেকোরেশন শ্রমিক নিহত যুদ্ধ বন্ধে কিছুই করেনি ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য
রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

ক্যাম্পে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ঢোকার আশঙ্কা!

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন সংস্থার মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ‘সন্ত্রাসী’ রোহিঙ্গাদের ঢুকে পড়ার আশঙ্কা করছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয় কক্সবাজারে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয়কারী ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপকে (আইএসসিজি) সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত আরআরআরসি মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত রবিবার কক্সবাজারে আইএসসিজির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ককে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গা শিবিরে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ‘ক্যাম্প ইনচার্জদের’ না জানিয়েই রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীদের সম্পৃক্ত করে থাকে। আর এই সম্পৃক্ততার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত রোহিঙ্গাদের নিয়োগ করার আশঙ্কা দেখা গেছে। এর ফলে সংস্থাগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এরই পটভূমিতে সংস্থাগুলোকে স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় অবশ্যই ক্যাম্প ইনচার্জদের সম্পৃক্ত করতে হবে। কোনো সংস্থা এই নির্দেশনা অনুসরণ না করলে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে এর দায় ওই সংস্থাকেই নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা শিবিরের বেশ কিছু বাসিন্দা বড় ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা বিভিন্ন সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিয়ে নিজেদের জন্য আরো বড় পরিসরে আশ্রয় খুঁজতে পারে বা নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করতে পারে। আবার তারা বড় ধরনের অঘটনও ঘটাতে পারে। ক্যাম্প ইনচার্জদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হলে তাদের পরিচিতি ও কর্মকাণ্ড যাচাই করার সুযোগ বাড়বে।

এদিকে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত রোহিঙ্গা নেতারাও (মাঝি নামে পরিচিত) সন্ত্রাস, খুন-খারাবিসহ অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে উদ্বেগ আছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যেও। রোহিঙ্গা শিবিরে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যা এবং গত ২২ অক্টোবর আরো ছয় রোহিঙ্গা হত্যায় কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝির যোগসাজশ থাকার তথ্য মিলেছে। মুহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত তিনজন রোহিঙ্গা মাঝি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন মাঝি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ২২ অক্টোবর নিহত ছয় রোহিঙ্গার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আর মাঝি এখন একাকার হয়ে গেছে। আগে মাঝিরা শিবিরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করতেন। কিন্তু এখন মাঝিরা নিজেরাই অশান্তি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে জড়িয়ে গেছেন।

বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের নদুয়াতুল উলুম মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মৌলভী আবু সৈয়দ জানান, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আগে সন্ত্রাসী দলের কর্মকাণ্ড সামাল দিতে এগিয়ে আসতেন শিবিরের দায়িত্বে থাকা মাঝিরা। কিন্তু এখন সন্ত্রাসের সঙ্গে অনেক রোহিঙ্গা মাঝি সরাসরি জড়িয়ে গেছেন।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ত্রাসে জড়িত অনেক রোহিঙ্গা নানা কৌশল ও তদবিরের মাধ্যমে মাঝি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। মাঝি হওয়ার সুযোগে সরকারি কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে তাঁরা কাজ করেন। এর আড়ালে মাঝিরা আরো অনেক অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছেন। রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এখন মাঝি বদলানোরও দাবি উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা কালের কণ্ঠকে বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে মাঝি নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোনো মাঝির বিরুদ্ধে অনিয়ম বা অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ উঠলেই তাঁকে সরিয়ে নতুন মাঝি নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার ৩৪টি শিবিরের প্রতিটিতে রয়েছেন একজন করে প্রধান মাঝি। এ ছাড়া শিবিরের ভেতর প্রতিটি ব্লকের জন্য একজন করে ব্লক মাঝি থাকে। একটি শিবিরে ছয় থেকে সাতটি করে ব্লক রয়েছে। সেই হিসাবে ৩৪টি শিবিরে রয়েছেন প্রায় ২২০ জন রোহিঙ্গা মাঝি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা চলছে। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলির দপ্তর রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। বিশেষ করে আইসিজের অন্তর্বর্তী রায়ে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে শুধু মিয়ানমারই নয়, বাংলাদেশসহ রোহিঙ্গারা যেখানে আছে, সেখানেই আদালতের দৃষ্টি রয়েছে। তাই বেশ সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গা শিবিরে সাম্প্রতিক সময়ে হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য রোহিঙ্গাদের অনেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরসাকে দায়ী করেছে। তবে এ নিয়ে নানা মত আছে। বাংলাদেশ জোর দিয়ে বলে আসছে, এখানে কোনো আরসা নেই। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নিচ্ছে।


আরো খবর: