মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

কারাগারে আটক জনপ্রিয় হেফাজ সিকদারকে পেতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বদরখালীবাসি

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক,চকরিয়া::

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে ইউপি নির্বাচনী প্রতিহিংসার জেরে একটি মামলার আসামি হয়ে বিনা বিচারে জেলহাজতে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন ওই জনপদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আনম হেফাজ সিকদার। মানুষগড়ার কারিগর শিক্ষক পেশা থেকে ২০১৬ ও ২০২১ সালের দুইটি ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগনের অকুণ্ঠ সমর্থনে সর্বাধিক ভোট পেলেও বারবার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে বিজয়ের মালা গলায় পড়তে পারেনি তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বদরখালী জনপদের ঐতিহ্যবাহি সিকদার পরিবারের সুযোগ্য উত্তরসূরী আনম হেফাজ সিকদার মানবিককাজের অংশ হিসেবে জনগনের সঙ্গে মিলেমিশে এক কাতারে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তাঁর ফলশ্রুতিতে বদরখালীবাসির সু:খ দু:খের সারথী হতে ২০১৬ সালে প্রথমবার ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়ে প্রায় ৪২০০ ভোট পেয়েছিলেন। সেবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নুরে হোছাইন আরিফ পেয়েছিলেন ১৭০০ ভোট এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আহসানুল কাদের সাব্বির পান ২৫০০ ভোট।
ওই নির্বাচনে কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফলে হেফাজ সিকদার চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হলেও রাতের মধ্যে মাত্র ৪২ ভোটের ব্যবধানে কাকতলীয়ভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন কোটিপতি প্রার্থী খাইরুল বশর। সিকদার পরিবারের দাবি, কুটকৌশলের মাধ্যমে সেবার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হলেও বদরখালী জনপদের প্রিয়মুখ আনম হেফাজ সিকদার বরাবরেই ছিলেন জনগনের পাশে। অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজয় বরণ করেও তিনি মানুষের সৃ:খ দু:খে কাছে থেকে কাজ করেছেন।
এভাবে পাঁচবছর জনগনের সঙ্গে মিলেমিশে বদরখালী ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের অধিকার আদায় ও সবধরণের যোক্তিক দাবির প্রতি বরাবরে অবিচল ছিলেন তিনি। সেই অনুপ্রেরণা থেকে জনগনের আহবানে জনপ্রিয় হেফাজ সিকদার ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আবারও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে অংশ নেন।
ওই নির্বাচনে আ ন ম হেফাজ সিকদার আবারো জনগনের আশা পূরণে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হন। সেই নির্বাচনে বদরখালী ইউনিয়নের ৪৬০০ জন ভোটার তাকে চশমা মার্কায় ভোট দেন। যদিও এ নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নৌকা নিয়ে নুরে হোছন আরিফ।
হেফাজ সিকদারের পরিবার ও এলাকাবাসির দাবি, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের দিন বিকালে কেন্দ্র ভিত্তিক ভোটের ফলাফল মেনে নিয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আনম হেফাজ সিকদার তাঁর কর্মী সমর্থক ও পরিবার সদস্যদের নিয়ে বাড়ি চলে যান। যে যার মতো রাতে খাবার শেষে বাড়িতে বিশ্রাম নেয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহুর্তে অথ্যাৎ রাত দশটার দিকে বদরখালী বাজারে ঘটে ইউপি মেম্বার প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘাতের ঘটনা।

চেয়ারম্যান প্রার্থী হেফাজ সিকদারের পরিবার সদস্যদের অভিযোগ, রাতে বদরখালী বাজারে মেম্বার প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের সময় মিন্টু নামের একব্যক্তি গুরুতর জখম হন। পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান। আর ওই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নির্বাচনী প্রতিপক্ষ চারদিন পর নিহতের স্বজনকে দিয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করেন।
আবার ওই মামলায় কাকতলীয়ভাবে আসামি করা হয় হেফাজ সিকদার ও তার ভাই, চাচাত ভাই এবং বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মী-সমর্থককে। যদিও নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান ছাড়াও প্রার্থী ছিলেন আরও ছয়জন। অথচ সেই মামলায় হেফাজ সিকদার ছাড়া বিজিত অপরাপর চেয়ারম্যান প্রার্থী কাউকে আসামি করা হয়নি। এতে স্বাভাবিক কারণে হেফাজ সিকদারের পরিবার মামলাটির পেছনে একটি প্রভাবশালী পক্ষ কলকাঠি নেড়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘাতের ঘটনায় কেন শুধুমাত্র দেখে দেখে হেফাজ সিকদার, তাঁর পরিবার এবং কর্মী-সমর্থকদের আসামি করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী হেফাজ সিকদার মায়ের দাবি, আমার ছেলে নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। মুলত জনপ্রিয়তায় ইর্ষাণিত হয়ে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে মামলায় তাকে এবং পরিবার সদস্য ও কর্মী-সমর্থকদের জড়িয়ে দিয়েছে। আমি এইধরণের হয়রাণিমুলক মামলার প্রত্যাচার চাই প্রশাসনের কাছে। অবিলম্বে আমার ছেলে মুক্তির প্রার্থনা জানাই বিজ্ঞ আদালতের কাছে।
হেফাজ সিকদারের চাচাতো ভাই সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি অ্যাডভোকেট রাজীব নুরী বলেন, ইউপি নির্বাচনী প্রতিহিংসার হয়রাণিমুলক এ মামলা থেকে হেফাজ সিকদার জামিন আবেদন করলে মহামান্য হাইকোর্ট অন্ত:বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন।
পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ হলে ২০২২ সালের ১৩ মার্চ কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে আ ন ম হেফাজ সিকদার এবং মামলার অন্য ১০ জন আসামি আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। ওইদিন শুনানী শেষে আদালত তাদেরকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন।
সেই থেকে থেকে অদ্যাবধি চেয়ারম্যান প্রার্থী হেফাজ সিকদার এবং অপরাপর আসামিরা বিনাবিচারে কারাগারে রয়েছেন। এই অবস্থায় বদরখালী ইউনিয়নের হাজারো মানুষ তাদের প্রিয়জন হেফাজ সিকদারকে ফিরে পেতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। পাশাপশি এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারপুর্বক ঘটনায় জড়িত দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে জোর দাবী জানিয়েছেন। ##


আরো খবর: