শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০০ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

কক্সবাজার-৪ আসনে নৌকা মাঝি হতে ইঁদুর-বিড়াল দৌড় প্রতিযোগিতায় স্বামী,বউ,শ্যালক,শ্বশুর!

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :
আপডেট: শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩

দুই বছরের বেশি দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির এবারের সংসদ নির্বাচনের আর অংশ নেয়ার সুযোগ হচ্ছে না!

দণ্ডিত ব্যক্তিদের আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকলেও তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ফলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার মূল দৌঁড়ে চলে এসেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার চৌধুরী ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার চৌধুরী সাবেক সংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী। উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির একমাত্র শ্যালক। অপরদিকে শাহিন আক্তার ও জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী আপন ভাই-বোন। এছাড়াও সাবেক সংসদ আবদুর রহমান বদির চাচা শশুর মুক্তিযোদ্ধ জাফর আলম চৌধুরীও দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তারা সকলেই দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় করে জমাও দিয়েছেন। তারা সকলেই নৌকার টিকিট পেতে হাইকমান্ডে দৌড়ঝাঁপ করছেন।

সচেতন মহলের মতে, কক্সবাজার -৪ (উখিয়া-টেকনাফ) সংসদীয় আসনে জামাই বউ ও শালা এবং চাচা শ্বশুর দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ার বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে সীমান্ত জনপদে।

বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার ও তার স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, শাহীন আক্তারের চাচা মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী,শাহীন আক্তারের আপন ভাই উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন এবং জমা দিয়েছেন।
একই আসনে শ্বশুর,শ্যালক,জামাই-বউ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কিনে জমা দেওয়ার বিষয়টি যেমন পুরো জেলার টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে, ঠিক তেমনি তাদের নিয়ে ট্রলও করা হচ্ছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানায়, আইনগত জটিলতার কারণে উখিয়া-টেকনাফ আসনের টানা দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি আগামী সংসদ নির্বাচনের দৌড় থেকে অনেকটা ছিটকে পড়েছেন। যার কারনে দলীয় মনোনয়ন লাভের মূল লড়াইয়ে অনেকটা এগিয়ে এসেছেন আপন ২ ভাই-বোন শাহিন আক্তার ও জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও চাচা জাফর আলম চৌধুরী। এরা ৩ জন সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা ও লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য।

এই তিন জন ছাড়াও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল বশর,সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি রাজা শাহ আলম,জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমেদ বাহাদুর, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর গনির পুত্র ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিন খালেদ,দুলাল মল্লিক,সোনা আলী, মনোয়ারা মুন্নী চৌধুরীসহ অনেকে৷

আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা জানান, হাইকোর্টের দেয়া পর্যবেক্ষণসহ ২ বছরের অধিক দন্ডিতদের রায় নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। এ রায়ের ফলে শুধু বিএনপিরই নয়, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও এমপিসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে জানা গেছে।

আইনগত জটিলতার কারনে যারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি। যদি আইনগত জটিলতার কারনে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে গতবারের মতো এবারও তার সুপারিশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। কারন তার সংসদীয় এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে যাকেই দলের মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন তাকেই এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসাবে বিজয় হয়ে আসতে আবদুর রহমান বদির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতা নিতেই হবে। এখন দেখার বিষয় স্ত্রী, শালা ও শশুর কার পক্ষে যাচ্ছেন বদির সুপারিশ বা সমর্থন । এখন কে হচ্ছেন আবদুর রহমান বদির রাজনীতিক কৌশলের কাছে রাজনৈতিক বলিরপাটা? তবে সাবেক সাংসদ বদির পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবী করেছেন আবদুর রহমান বদি তার স্ত্রী শাহিন আক্তারকে আবারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দিতে কাজ করতেছেন। সেক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও জাফর আলম চৌধুরী জন্য দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এবারও সোনার হরিণ হয়ে থাকবে এবং দলীয় মনোনয়ন লাভের অপেক্ষার পালা তাদের জন্য আবারও দীর্ঘ হবে!

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্যানুযায়ী, দণ্ডিত হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। তিনি দুই বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তাঁর আপিল বিচারাধীন। আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকায় এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আবদুর রহমান বদির নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিতদের খালাস না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই এমন মন্তব্য করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান বলেন, নৈতিক স্খলনের মামলায় দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনে অযোগ্য হন। সাজা কখনো স্থগিত হয় না। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড বহাল থাকবে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড.শাহ্‌দীন মালিক বলেন, হাইকোর্টেও নতুন ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হবেন। এর অর্থ হলো, এখন কেউ যদি দণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং তার আপিল যদি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে, তাহলে তিনি খালাস না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অর্থাৎ এটা যদি কার্যকর হয়, তাহলে আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই আগামী জাতীয় নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে। ফলে আপিল করেও
দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবেন। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটি আপিল বিভাগেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।

সুশীল সমাজের মতে, দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া বা মত। আইনজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি সংবিধানসম্মত। আবার কারও মতে, আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে এমন পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অবশ্য যতক্ষণ না আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল বা স্থগিত করে তাকে জামিন দেন। কারণ, কোনো আদালতের দেয়া সাজার বিরুদ্ধে আপিল বিচারাধীন থাকলেও দণ্ড বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই দণ্ড কার্যকর থাকে। এটা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি বাধা। এক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের বিধানই প্রাধান্য পাবে।


আরো খবর: