বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

কক্সবাজার চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে চাহিদা মেটাবে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩

সৈয়দুল কাদের::

চলতি বছরের ডিসেম্বরেই চালু হতে যাচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট। এখন পরীক্ষমুলক উৎপাদন শুরু হলেও আগামী বছরের এপ্রিলে উৎপাদনে যাবে আরো একটি ইউনিট।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাতারবাড়ীতে উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ ৪০০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরী ও কক্সবাজারে সরবারহ করা হবে। দুইটি ইউনিট চালু হলেই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে লোডশেডিং কমে যাবে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের চাহিদা মিঠিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অন্য গ্রিডেও সরবারহ করা হবে।
মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সূত্র জানায়, কয়লা দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৬০০ মেগাওয়াট আগামী এপ্রিলে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর। যেখানে ভিড়তে পারবে ৮২০০ টিইইউএস ক্ষমতার কন্টেইনার জাহাজ। এই বন্দরের ফলে একদিকে যেমন পণ্য পরিবহনে সময় কম লাগবে, অন্যদিকে সহজ আমদানি-রপ্তানিতে দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। এই দুটি মেগা প্রকল্প ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে স্থানীয় অবকাঠামো খাতে। সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডডের নির্বাহী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল হক বলেন, ইতোমধ্েয পরিক্ষামুলক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চলমান রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরজমিনে দেখা যায়, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি। সমুদ্রপথে বিদেশ থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজ ভিড়ছে বন্দরে। পরিবেশসম্মত উপায়ে স্থাপন করা হয়েছে কোল্ড ইয়ার্ড। সাগরে যাতে কোনো প্রকার বর্জ্য যেতে না পারে, সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জেটিতে রাখা জাহাজ থেকে কয়লা নামানোর সময় মাত্র একবার ওই কয়লা দেখা যাবে। এরপর ওই কয়লা সরাসরি প্ল্যান্টে চলে যাবে। কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাসিয়াখালী থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে মাতারবাড়ী বন্দর থেকে ধলঘাট গোলচত্বর পর্যন্ত সোয়া ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক চারলেনে উন্নতি করা হচ্ছে। এছাড়া ধলঘাট থেকে ফাসিয়াখালী পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের জন্য ২ লেনের ২৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে ৪ লেনের মহাসড়কে উন্নতি করা হবে বলে জানিয়েছেন সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. জাকির হোসেন।
কয়লাবিদ্যুৎ ও গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প ঘিরে এখানকার অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্রও এখন দৃশ্যমান। এ দুটি প্রকল্প ঘিরে স্থানীয়দের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ দুটি প্রকল্পে এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
গভীর সমুদ্র বন্দরটি পড়েছে ধলঘাটা ইউনিয়নে, আর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অর্ধেক ধলঘাটা বাকি অর্ধেক মাতারবাড়ী ইউনিয়নে পড়েছে। এই দুই ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তারা আগে লবণ উৎপাদন, পান, চিংড়ি ও মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কেউ কেউ শুটকি শুকানো ও সাগরে মাছ ধরার কাজ করতেন। বছরের কয়েক মাস তারা এসব খাতে কাজ করতে পারতেন। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সমুদ্র বন্দর হওয়ায় তারা এসব প্রকল্পে, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, নদীর বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ করতে পারছেন। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এসে এখন প্রকল্পের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
জানতে চাইলে কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, গভীর সমুদ্র বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ চিন্তা-ভাবনায় মাতারবাড়ীতে বড় দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক পোর্টটি নির্মাণ হলে শুধু মাতারবাড়ী, কক্সবাজারের মানুষ নয়, সারাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে। বন্দরের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গের বাংলাদেশের সংযোগ বাড়বে। প্রকল্পের কারণে এখানকার রাস্তা-ঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। স্থানীয়দের পেশা বদলে গেছে। আগামী প্রজন্মের জন্য স্কুল-কলেজ, ট্রেনিং সেন্টার করা হচ্ছে। এতে তারা দক্ষ হয়ে এসব প্রকল্পেই কাজ করতে পারবে।


আরো খবর: